শনিবার, ২১ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৬:০৫ অপরাহ্ন

চসিকের কোরবানি পশুর অস্থায়ী হাট বাড়েনি, বাড়বে আয়

মাসুদ পারভেজ বিভাগীয় ব্যুরোচীফ
চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিক) ব্যবস্থাপনায় এবার নগরে কোরবানি পশুর অস্থায়ী হাটের সংখ্যা বাড়ছে না। গতবারের মতো এবারও সাতটি অস্থায়ী পশুর হাট বসবে। হাটগুলোর জন্য ইজারাদার চূড়ান্ত করেছে সংস্থাটি। ইজারা দিয়ে এসব হাট থেকে গতবারের চেয়ে ২ কোটি ৬২ লাখ ৩৮ হাজার ৩৭০ টাকা বেশি রাজস্ব আয় হচ্ছে চসিকের। সরকারি মূল্যের চেয়ে যা ১ কোটি ৭৬ লাখ ৭৭ হাজার ১৩৭ টাকা বেশি। চসিকের রাজস্ব শাখা সূত্রে জানা গেছে, অস্থায়ী হাটগুলোতে ইজারাদার নিয়োগে গত ২০ মে দরপত্র আহ্বান করা হয়। ৩০ মে ছিল দরপত্র জমা দেওয়ার শেষ দিন। এবার সাতটি বাজারের বিপরীতে ১৭১টি দরপত্র বিক্রি হলেও জমা পড়ে ২৬টি দরপত্র জমা পড়ে। যাচাই–বাছাই শেষে গতকাল সর্বোচ্চ দরদাতাকে ইজারাদার হিসেবে নিয়োগের জন্য চূড়ান্ত করা হয়। এতে সাতটি বাজার থেকে চসিকের আয় হবে ৫ কোটি ৬ লাখ ৩৪ হাজার ৩৭০ টাকা। গতবার (২০২৩) একই বাজারগুলো থেকে আয় হয়েছিল ২ কোটি ৬২ লাখ ৩৮ হাজার ৩৭০ টাকা। এর আগে ২০২২ সালে মাত্র তিনটি বাজার থেকে আয় হয় ৪ কোটি ৯৩ লাখ ৭০ হাজার টাকা। জানা গেছে, দরপত্র আহ্বানের সময় হাটগুলোর জন্য একটি সরকারি মূল্য নির্ধারণ করা হয়। বিগত তিন বছরের গড় মূল্যের ওপর ৬ শতাংশ বৃদ্ধি করে এ মূল্য নির্ধারণ করা হয়। ওই হিসেবে এবার সরকারি মূল্য ছিল ৩ কোটি ২৯ লাখ ৫৭ হাজার ২৩৩ টাকা। অর্থাৎ এবার বাজার ইজারা দিয়ে সরকারি মূল্যের চেয়েও বেশি আয় হচ্ছে চসিকের।
চসিকের স্টেট অফিসার রেজাউল করিম সর্বোচ্চ দরদাতাকে ইজারাদার হিসেবে নিয়োগ করা হচ্ছে বলে নিশ্চিত করেন। কোন বাজারের বিপরীতে কত রাজস্ব : এবার কর্ণফুলী পশুর বাজার (নুর নগর হাউজিং এস্টেট অথবা বহদ্দারহাট এক কিলোমিটার হতে শাহ আমানত ব্রিজের উত্তর পাশ পর্যন্ত) থেকে চসিকের রাজস্ব আদায় হবে ২ কোটি ২০ হাজার টাকা, যা গতবার ছিল ১ কোটি ৯৫ লাখ টাকা। এর আগে ২০২২ সালে ৩ কোটি ৭৭ লাখ টাকা, ২০২১ সালে ২ কোটি ২০ হাজার টাকা এবং ২০২০ সালে ২ কোটি ৩৭৭ টাকা রাজস্ব পায় চসিক। অস্থায়ী পশুর হাটটি ইজারা দিয়ে গতবারের চেয়ে আয় বাড়লেও সরকারি মূল্যের চেয়ে রাজস্ব কমেছে। এবার সরকারি মূল্য ছিল ২ কোটি ৭২ লাখ ৮৪ হাজার ৫৩৩ টাকা। এ বিষয়ে চসিকের স্টেট অফিসার রেজাউল করিম বলেন, কর্ণফুলী অস্থায়ী পশুর বাজারের স্থানটিতে জায়গার স্বত্বাধিকারী নুর নগর হাউজিং এস্টেট কর্তৃপক্ষ কিছু কিছু প্লটে ঘরবাড়ি নির্মাণ করেছেন। অন্যদিকে কর্পোরেশনের বারইপাড়া থেকে কর্ণফুলী নদী পর্যন্ত খাল খনন প্রকল্পের কাজ চলমান থাকায় বাজার স্থাপনের জায়গাটি সংকুচিত হয়ে পড়েছে। বাজারের ইজারামূল্য ক্রমে বৃদ্ধি পাওয়ায় ইজারাদারগণ থেকে কাঙ্ক্ষিত সরকারি মূল্যের বেশি দর পাওয়া যায়নি। পুনরায় দরপত্র আহ্বানের সময় না থাকায় চসিকের রাজস্ব হারানোর আশঙ্কা থেকে গতবারের মূল্যের চেয়ে বেশি প্রাপ্ত সর্বোচ্চ দর গ্রহণ করে ইজারা প্রদানের বিষয়ে সর্বসম্মতিক্রমে সুপারিশ করা হয়।
এদিকে বাকি ছয় পশুর হাটের মধ্যে ৪১ নং ওয়ার্ডের বাটারফ্লাই পার্কের দক্ষিণে টিকে গ্রুপের খালি মাঠের বিপরীতে ৫০ লাখ টাকা আয় হবে। গতবার আয় হয় ১৫ লাখ টাকা। ২০২২ সালে বাজারটি ইজারা দেওয়া হয়নি। এর আগে ২০২১ সালে এ বাজার ইজারা দিয়ে ২৬ লাখ টাকা রাজস্ব পায় চসিক।
৪০ নং উত্তর পতেঙ্গা ওয়ার্ডের পূর্ব হোসেন আহম্মদ পাড়া সাইলো রোডের পাশে টিএসপি মাঠে বসা হাটের বিপরীতে ১৪ লাখ ৬০ হাজার ৫০০ টাকা আয় হবে। গতবার আয় হয় ১১ লাখ ৫১ হাজার টাকা। একই ওয়ার্ডের মুসলিমাবাদ রোডের সিআইপি জসিমের খালি মাঠে বসা হাটের বিপরীতে এবার ২ লাখ টাকায় আয় হবে। এ বাজারে গতবার আয় হয় ১ লাখ ৭০ হাজার টাকা।
এবার ২৬ নং ওয়ার্ডের বড়পোল সংলগ্ন গোডাউনের পরিত্যক্ত মাঠে বসা হাট ইজারা দিয়ে ১৬ লাখ ২ হাজার ৩৭০ টাকা আয় হবে। গতবার আয় হয় ৪ লাখ টাকা। ৩ নং পাঁচলাইশ ওয়ার্ডের ওয়াজেদিয়া মোড়ে হাট ইজারা দিয়ে এবার ২ লাখ ৫১ হাজার টাকা আয় হবে। গতবার ১ লাখ ৭৫ হাজার টাকা আয় হয়। ৩৯ নং দক্ষিণ হালিশহর ওয়ার্ডের আউটার রিং রোডস্থ সিডিএ বালুর মাঠে বসা হাট ইজারা দিয়ে এবার আয় হবে ২ কোটি ২১ লাখ টাকা। গতবার ১৫ লাখ টাকা রাজস্ব পায় চসিক।
চসিকের রাজস্ব শাখার তথ্য অনুযায়ী, এবার নয়টি অস্থায়ী পশুর হাট বসানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়। প্রস্তাবিত এসব অস্থায়ী হাট বসানোর অনুমতি চেয়ে ৯ এপ্রিল জেলা প্রশাসনের কাছে আবেদন করে সংস্থাটি। চসিকের কাছ থেকে আবেদন পাওয়ার পর জেলা প্রশাসন চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ ও জেলা পুলিশের কাছে হাটগুলোর বিষয়ে মতামত চেয়ে ৫ মে চিঠি দেয়। তবে প্রস্তাবিত নয়টি অস্থায়ী পশুর হাটের মধ্যে দুটি নিয়ে আপত্তি জানায় পুলিশ। এর মধ্যে নগর পুলিশ একটি এবং জেলা পুলিশ একটি হাট নিয়ে আপত্তি জানায়। পরে ১৫ মে জেলা প্রশাসন ১৪ শর্তে চসিককে সাতটি বাজার বসানোর অনুমতি দেয়।
অবশ্য অস্থায়ী হাটগুলোর বাইরে চসিকের ব্যবস্থাপনায় তিনটি স্থায়ী পশুর হাট আছে নগরে। এগুলো হচ্ছে সাগরিকা পশুর বাজার, বিবিরহাট গরুর হাট ও পোস্তারপাড় ছাগলের বাজার। চাঁদ দেখা সাপেক্ষে প্রতি বছর ১ থেকে ১০ জিলহজ্ব পর্যন্ত চসিকের ব্যবস্থাপনায় নগরে কোরবানি পশুর স্থায়ী–অস্থায়ী হাট বসে। এবারও চাঁদ দেখা সাপেক্ষে আগামী ৮ জুন থেকে হাট বসার কথা।

খবরটি শেয়ার করুন

© All rights reserved © 2024 thedailyagnishikha.com
Design & Developed BY Hostitbd.Com