অগ্নিশিখা অনলাইন
- ৩০ জুলাই, ২০২৪ / ৬৮ বার
মাসুদ পারভেজ বিভাগীয় ব্যুরো
বিপুল সংখ্যক কন্টেনার ডেলিভারি এবং রপ্তানি হওয়ার পর চট্টগ্রাম বন্দরের কন্টেনার জট পরিস্থিতি একদিনেই সহনীয় মাত্রায় নেমে এসেছে। গতকাল সোমবার বন্দরের ইয়ার্ডে থাকা কন্টেনারের পরিমাণ ৪১ হাজারের বেশি থেকে ৩৮ হাজারে নেমে এসেছে। কোটা সংস্কার আন্দোলন ইস্যুকে ঘিরে সৃষ্ট পরিস্থিতি ক্রমে স্বাভাবিক হয়ে আসায় দেশের আমদানি–রপ্তানি বাণিজ্যে ইতিবাচক প্রভাব পড়ছে বলে উল্লেখ করে সংশ্লিষ্টরা বলেছেন বিদ্যমান ধারা অব্যাহত এবং আমদানিকারকেরা পণ্য খালাস করে নিলে বন্দর পরিস্থিতির দ্রুত উন্নতি ঘটবে।
সূত্র বলেছে, কোটা সংস্কার আন্দোলন ইস্যুকে ঘিরে ইন্টারনেট সেবা বন্ধ, সাধারণ ছুটি এবং কারফিউ মিলে চট্টগ্রাম বন্দর থেকে পণ্য ডেলিভারি পুরোপুরি বন্ধ ছিল টানা পাঁচদিন। এতে দেশের আমদানি–রপ্তানি বাণিজ্যের প্রবেশদ্বার খ্যাত চট্টগ্রাম বন্দর পরিস্থিতির বেশ অবনতি ঘটে। আমদানিকৃত পণ্য বোঝাই কন্টেনার ডেলিভারি না হওয়ায় বন্দরে কন্টেনারের পাহাড় গড়ে উঠে। চট্টগ্রাম বন্দরের ইয়ার্ডে কন্টেনার রাখার ধারণক্ষমতা ৫৩ হাজার ৫১৮ টিইইউএস। বন্দরে স্বাভাবিক সময়ে গড়ে ৩০/৩১ হাজার টিইইউএস কন্টেনার থাকে। কিন্তু ডেলিভারি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় পাঁচ দিনে বন্দর ইয়ার্ডে কন্টেনারের সংখ্যা ৪২ হাজার টিইইউএস ছুঁই ছুঁই করে। ধারণক্ষমতা বেশি থাকার কারণে ইয়ার্ডে কন্টেনার রাখার জায়গার সংকট না হলেও কন্টেনার মুভারসহ হ্যান্ডলিং ইকুইপমেন্ট পরিচালনা করতে বেগ পেতে হয়। এতে বন্দরের কাজের গতি কমে যায়। যার নেতিবাচক প্রভাব পড়ে দেশের আমদানি রপ্তানি বাণিজ্যে। রোববার চট্টগ্রাম বন্দরের ইয়ার্ডে ৪১ হাজার ১৮৩ টিইইউএস কন্টেনার ছিল। যা স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় অনেক বেশি।
কিন্তু গতকাল সোমবার বন্দর থেকে বিপুল সংখ্যক কন্টেনার হ্যান্ডলিং এবং ডেলিভারি হয়েছে। জাহাজে প্রচুর কন্টেনার উঠানো হয়েছে, আবার একইসাথে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক কন্টেনার ডেলিভারিও হয়েছে। ফলে একদিনের ব্যবধানে বন্দরের ইয়ার্ডে থাকা কন্টেনারের সংখ্যা ৩৮ হাজার টিইইউএস–এর কাছাকাছিতে নেমে আসে। যেটিকে বন্দরের কর্মকর্তারা সহনীয় জট হিসেবে উল্লেখ করছেন। তারা বলেছেন, বন্দরের ইয়ার্ডে কন্টেনারের ধারণক্ষমতা থাকলেও কন্টেনারের সংখ্যা বেড়ে গেলে স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যাহত হয়। যা কমিয়ে আনার জন্য বন্দর কর্তৃপক্ষ নানাভাবে চেষ্টা করে।
বন্দর সূত্র জানায়, গতকাল সোমবার চট্টগ্রাম বন্দর থেকে ৩ হাজার ৩৫১ টিইইউএস কন্টেনার ডেলিভারি হয়েছে। এরমধ্যে আমদানিকারক নিয়ে গেছেন ২ হাজার ৪৬৩ টিইইউএস এবং আইসিডিতে পাঠানো হয়েছে ৮৮৮ টিইইউএস কন্টেনার। অপরদিকে গতকাল চট্টগ্রাম বন্দরে বার্থিং এ থাকা বিভিন্ন জাহাজ থেকে ৩ হাজার ৭৫ টিইইউএস কন্টেনার নামানো হয়েছে। জাহাজে তোলা হয়েছে ৫ হাজার ৩১৪ টিইইউএস রপ্তানি পণ্য। এরমধ্যে বন্দরের ইয়ার্ড থেকে পাঠানো হয়েছে ২ হাজার ৬০৫ টিইইউএস এবং আইসিডি থেকে ২ হাজার ৭০৯ টিইইউএস। বন্দরে গতকাল হ্যান্ডলিং হয়েছে ৮ হাজার ৩৮৯ টিইইউএস কন্টেনার।
বন্দরের কর্মকর্তারা বলেছেন, কন্টেনার ডেলিভারির পরিমাণ বেড়েছে। এই ধারা ধরে রাখা গেলে বিরাজমান কন্টেনারজট অচিরেই সামলে নেয়া সম্ভব হবে। তারা বলেন, বন্দরের ইয়ার্ডে গতকাল সর্বমোট ৩৮ হাজার ৬০২ টিইইউএস কন্টেনার ছিল। এর সিংহভাগই আমদানিকৃত পণ্য বোঝাই কন্টেনার। এরমধ্যে পুরো কন্টেনারের পণ্য একক আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানের আমদানিকৃত (এফসিএল) কন্টেনার রয়েছে ৩৪ হাজার ৬১৪ টিইইউএস, একই কন্টেনারে বিভিন্ন আমদানিকারকের পণ্য রয়েছে (এলসিএল) এমন কন্টেনারের সংখ্যা রয়েছে ৮১৭ টিইইউএস। আইসিডিমুখি কন্টেনার রয়েছে ১ হাজার ৫৩২টিইইউএস। খালি কন্টেনার রয়েছে ৬৫৯ টিইইউএস এবং রপ্তানি পণ্য বোঝাই কন্টেনার রয়েছে ৯২২ টিইইউএস। এই সংখ্যাকে অসহনীয় না বলে সহনীয় জট হিসেবে মন্তব্য করে বন্দরের কর্মকর্তারা বলেছেন, বন্দরের ইয়ার্ডে থাকা কন্টেনারের সংখ্যা সহনীয় পর্যায়ে চলে এসেছে। তবে এটি আরো কমে আসলে বন্দরে কাজের গতি বৃদ্ধি পাবে।
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব মোহাম্মদ ওমর ফারুক গতকাল বলেছেন, কন্টেনার নিয়ে আমাদের আর কোনো সমস্যা হবে না। সহনীয় পর্যায়ে চলে এসেছে। এই সপ্তাহের শেষদিকে এই সংখ্যা আরো অনেক কমে যাবে বলেও তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন।