অগ্নিশিখা অনলাইন
- ১৭ আগস্ট, ২০২৪ / ১০৭ জন দেখেছে
মাসুদ পারভেজ বিভাগীয় ব্যুরো
চট্টগ্রাম: নগরের চান্দগাঁও থানায় চট্টগ্রামে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে আশেকান আউলিয়া ডিগ্রি কলেজের এইচএসসি পরীক্ষার্থী তানভীর ছিদ্দিকী নিহতের ঘটনায় একটি হত্যা মামলা করা হয়েছে। মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক শিক্ষা মন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান নওফেলকে হুকুমের আসামি করা হয়েছে।
শুক্রবার (১৬ আগস্ট) রাতে নিহত তানভীর ছিদ্দিকীর চাচা মো. পারভেজ বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেন বলে জানিয়েছেন চান্দগাঁও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাহিদুল কবির।
তানভীর ছিদ্দিকী (১৯), কক্সবাজার জেলার মহেশখালী উপজেলার কালামারছড়া নয়াপাড়ার নুর আহম্মেদ বাড়ীর বাদশা মিয়ার ছেলে।
গত ১৮ আগস্ট নগরের চান্দঁগাও থানায় বহদ্দারহাট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় দুই পক্ষের সংঘর্ষে নিহত হয় সে। তার সহপাঠী ও বন্ধুরা সেসময় অভিযোগ করেছিলেন, আওয়ামী-যুবলীগের নেতাকর্মীরা তাকে হত্যা করেছে।
শুক্রবার রাতে করা হত্যা মামলায় শেখ হাসিনা ও মহিবুল হাসান নওফেল ছাড়াও চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ ও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন তিনজন কাউন্সিলরসহ ৩৪ জনের নাম উল্লেখ করা হয়। অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে আরও ৪০ থেকে ৫০ জনকে।
উল্লেখযোগ্য অন্যান্য আসামিরা হলেন, চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগ নেতা বাবর আলী (৫৫), চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক মশিউর রহমান চৌধুরী (৫০), চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক নুরুল আজিম রনি (৩৫), চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের ৪ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো. এসরারুল হক (৪৫), জামালখান ওয়ার্ডের কাউন্সিলর শৈবাল দাশ সুমন (৫০) ও চকবাজার ওয়ার্ডের কাউন্সিলর নুর মোস্তফা টিনু (৪২)।
এছাড়া আরও আসামি করা হয়েছে, তারেক বিন ওসমান শরীফ (৩৫), নোমান শরীফ (৩৭), মহিউদ্দীন ফরহাদ (৪৫), মো. জালাল প্রকাশ ড্রিল জালাল (৪২), মো. ফরিদ (৪২), চট্টগ্রাম সিটি কলেজ ছাত্র সংসদের ভিপি মো. তাহসীন (২৭), এইচ এম মিঠু (৪০), নুরুল আলম (৪৮), আরিফ ইফতেকার রশিদ (৩২), ওসমান গণি (৫৫), ইলিয়াছ বাবুল (৪৫), মাইনুল ইসলাম শরীফ, মনির উদ্দিন (২৩), মো. ফিরোজ (৩৮), জাফর আলম (৫৫), মো. দেলোয়ার (৪০), মো. জিয়াউদ্দীন আরমান (২৫), মনছুর আবেদীন (২৫), আবুল হাসনাত (৩৮), মো. জাফর (৩৮), মোহাম্মদ সুমন উদ্দীন (২৮), হোসাইন অভি (২৪), মো. শোয়াইব (৩৮), মিজান সিকদার (৩৫), মো. কাইসার (৪০) ও মাহবুব আলম (৪২)।
মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে, গত ১৭ জুলাই আশেকান আউলিয়া ডিগ্রি কলেজের এইচএসসি পরীক্ষার্থী তানভীর ছিদ্দিকী দুপুরে অন্যান্য ছাত্র-ছাত্রীদের সঙ্গে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে সমগ্র বাংলাদেশ ‘শাট-ডাউন’ কর্মসূচীতে অংশগ্রহণ করে পাঁচলাইশ থানার মুরাদপুর এলাকা থেকে মিছিল যোগে নগরের চান্দগাঁও থানার বহদ্দারহাট কাঁচাবাজারের সামনে রাস্তার ওপর শান্তিপূর্ণভাবে অবস্থান করেন। একই দিন বিকেলে ৪ টা ২০ মিনিটের দিকে পূর্ব পরিকল্পিতভাবে সাবেক প্রধানমনমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক শিক্ষা মন্ত্রী মহিবুল হাসান নওফেলের নির্দেশে ও হুকুমে মামলার ৩ থেকে ৩৪ নম্বর আসামিরাসহ অজ্ঞাতনামা ৪০ থেকে ৫০ জন আসামি বেআইনী তাহাদের হাতে থাকা ধারালো চাপাতি, কিরিচসহ মারাত্মক আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে বহদ্দারহাট ওয়াপদা অফিসের দিক থেকে এসে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকারী তানভীর ছিদ্দিকীসহ অন্যান্য ছাত্র-ছাত্রীদের দিকে ইট-পাথর নিক্ষেপসহ এলোপাতাড়ি গুলি বর্ষণ করে। এতে তানভীর ছিদ্দিকী গুলিবিদ্ধ হয় এবং কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীসহ অনেকেই গুলিবিদ্ধ হয়ে গুরুতর আহত হয়। গুরুতর জখম অবস্থায় তানভীর ছিদ্দিকীকে উদ্ধার করে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে মৃত ঘোষণা করেন। একই ঘটনায় একই সময়ে একই স্থানে গুলিবিদ্ধ হয় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র হৃদয় চন্দ্র তরুয়া (২৩)। তিনি ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ও বহদ্দারহাট কাঁচা বাজার মুদির দোকানের কর্মচারী পথচারী সাইমন প্রকাশ মাহিন চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন।
চান্দগাঁও থানার ভার্রপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাহিদুল কবির বলেন, চট্টগ্রামে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে আউলিয়া ডিগ্রি কলেজের এইচএসসি পরীক্ষার্থী তানভীর ছিদ্দিকী নিহতের ঘটনায় একটি হত্যা মামলা করা হয়েছে। মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক শিক্ষামন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান নওফেলসহ ৩৪ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত ৪০ থেকে ৫০ জনকে আসামি করা হয়েছে।
মামলা বাদী নিহত তানভীর ছিদ্দিকীর চাচা মো. পারভেজ থানায় মামলার বিষয়টি স্বীকার করলেও আর কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি