শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৭:০৫ অপরাহ্ন

সর্বশেষ :
মহদীপুর ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হলেন বিএনপি নেতা আজাদুল ইসলাম কালিগঞ্জে ৩৪৭ বোতল ফেন্সিডিল সহ দুই মাদক ব্যবসায়ী আটক যশোরে ১৮ লাখ টাকা আত্মসাৎ এর অভিযোগ পদ্মা সেতু হয়ে ঢাকা -খুলনা ট্রেন চলাচল শুরু ২ ডিসেম্বর সিনেমা করব না এটা কখনোই বলিনি: কেয়া পায়েল আইপিএল নিলামের আগে নিষিদ্ধ হলেন ভারতের ২ ক্রিকেটার শেখ হাসিনাকে নিয়ে যুক্তরাজ্যে এম সাখাওয়াতের বিস্ফোরক মন্তব্য, কী বলেছেন এই উপদেষ্টা লক্ষ্মীপুরের চন্দ্রগঞ্জে বিএনপি’র নাম ভাঙ্গিয়ে চাঁদাবাজি, সন্ত্রাসের প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল আ. লীগের রাজনীতি করার বিষয়ে যে মন্তব্য করলেন নাহিদ ইসলাম যুক্তরাজ্যে ঢুকলেই গ্রেপ্তার হতে পারেন নেতানিয়াহু

বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত অর্ধকোটি মানুষ, মৃত্যু বেড়ে ১৮

অগ্নিশিখা প্রতিবেদকঃদেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের জেলাগুলোতে উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল ও অতি বৃষ্টিতে ভয়াবহ বন্যা দেখা দিয়েছে। এতে এখন পর্যন্ত ১১ জেলায় ১০ লাখ ৪৭ হাজার ২৯টি পরিবার পানিবন্দি হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন ৫২ লাখ ৯ হাজার ৭৯৮ জন মানুষ।

আজ রোববার (২৫ আগস্ট) সচিবালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. কামরুল হাসান সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান।

দেশের বিভিন্ন জেলায় বন্যার অবনতি ঘটে মঙ্গলবার থেকে। এর আগে বঙ্গোপসাগরে সৃষ্টি হয় লঘুচাপ। এর প্রভাবে বৃষ্টির পরিমাণ বাড়তে থাকে। মঙ্গলবার থেকে টানা বৃষ্টি শুরু হয় চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের বেশির ভাগ জেলায়। বৃষ্টির পানির সঙ্গে যুক্ত হয় পাহাড়ি ঢল। এছাড়া পূর্ণিমার কারণে জোয়ারের পানির উচ্চতাও ছিল অস্বাভাবিক। সবকিছু মিলিয়ে ১১ জেলায় দেখা দেয় ভয়াবহ বন্যা। এ তালিকায় রয়েছে ফেনী, কুমিল্লা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, চট্টগ্রাম, লক্ষ্মীপুর, কক্সবাজার, খাগড়াছড়ি, নোয়াখালী, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ ও সিলেট।

দেশের সার্বিক বন্যা পরিস্থিতি সম্পর্কে গতকাল রাতে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের প্রতিবেদনে জানানো হয়, ১১ জেলার ৭৭ উপজেলার ৫৮৭টি ইউনিয়ন ও পৌরসভা বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আকস্মিক এ বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৫০ লাখ ৯৩ হাজার ৫৩০ জন। পানিবন্দি পরিবারের সংখ্যা ৯ লাখ ৭৯ হাজার ৯০১।

প্রতিবেদনে আরো জানানো হয়, মঙ্গলবার থেকে গতকাল পর্যন্ত দেশের সাত জেলায় ১৮ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। এর মধ্যে চট্টগ্রামে পাঁচ, কুমিল্লায় চার, নোয়াখালী ও কক্সবাজারে তিনজন করে এবং ফেনী, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও লক্ষ্মীপুরে একজন করে মারা গেছেন। এছাড়া গতকাল পর্যন্ত ৩ হাজার ৫১৩টি আশ্রয় কেন্দ্র খোলা হয়েছে। এসব কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছেন ৩ লাখ ১ হাজার ৯৯৩ জন। আশ্রয় কেন্দ্রে আনা হয়েছে ২১ হাজার ৬৯৫টি গবাদি পশুও।

এর আগে দুপুরে এক সংবাদ সম্মেলনে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. কামরুল হাসান বলেন, ‘আবহাওয়া সংস্থাগুলোর তথ্য অনুযায়ী আগামী ২৪ ঘণ্টায় দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চল এবং তৎসংলগ্ন উজানে ভারি বৃষ্টিপাতের আভাস নেই। এ সময় মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জ জেলার মনু, খোয়াই ও ধলাই নদীসংলগ্ন এলাকায় বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।’

তিনি আরো বলেন, ‘আগামী ২৪ ঘণ্টায় দেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে এবং তৎসংলগ্ন উজানে ভারি বৃষ্টিপাতের আভাস নেই। এ সময় এ অঞ্চলের ফেনী, কুমিল্লা ও চট্টগ্রাম জেলার মুহুরী, গোমতী ও হালদা নদীসংলগ্ন এলাকায় বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হবে বলে আশা করা হচ্ছে।’”

এদিকে বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের সর্বশেষ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, পূর্বাঞ্চলীয় কুমিল্লা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও ফেনী জেলার ত্রিপুরা সীমান্তবর্তী অঞ্চলে এবং ত্রিপুরা প্রদেশের অভ্যন্তরীণ অববাহিকায় উল্লেখযোগ্য বৃষ্টিপাত হয়নি। উজানের নদ-নদীর পানি কমে যাচ্ছে। ফলে মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, ফেনী, কুমিল্লা ও চট্টগ্রাম জেলার নিম্নাঞ্চলের বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি ঘটছে।

কুমিল্লায় সার্বিক পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হলেও অবনতি ঘটেছে বুড়িচং উপজেলায়। গোমতী নদীর বাঁধ ভেঙে যাওয়ার পর পানিতে তলিয়ে যায় বুড়িচংয়ের সব ইউনিয়ন। গতকাল পর্যন্ত উপজেলার প্রায় দুই লাখ মানুষ পানিবন্দি ছিল।

ফেনীতে পরশুরাম ও ছাগলনাইয়া উপজেলায় ধীরে ধীরে কমতে শুরু করেছে বন্যার পানি। তবে সদর উপজেলার ১২ ইউনিয়ন ও পৌরসভার ১৮টি ওয়ার্ড গতকাল পর্যন্ত পানিবন্দি ছিল। ফেনী জেলা প্রশাসন জানায়, এখন পর্যন্ত জেলায় তিন লাখ মানুষ বন্যায় আক্রান্ত। ২০ হাজার মানুষকে উদ্ধার করে বিভিন্ন আশ্রয় কেন্দ্রে রাখা হয়েছে।

লক্ষ্মীপুরে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। জেলার পাঁচটি উপজেলায় বন্যার পানির উচ্চতা বেড়েছে। বন্ধ করে দেয়া হয়েছে বিদ্যুৎ সরবরাহ। ফলে প্রায় ২০ হাজার গ্রাহক বিদ্যুৎহীন অবস্থায় রয়েছে।

চট্টগ্রামের মিরসরাই উপজেলায় গতকালও নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হয়েছে। এতে করে বাড়ছে বানভাসি মানুষের সংখ্যা। আশ্রয় কেন্দ্রে উঠেছে প্রায় ১৫ হাজার মানুষ। উপজেলার ১৬টি ইউনিয়ন ও দুটি পৌরসভার সবই প্লাবিত হয়েছে। দিনে পানি কিছুটা কমলেও রাতে আবার বেড়ে যাচ্ছে।

এদিকে উজান থেকে নেমে আসা ঢলের প্রভাবে মুন্সিগঞ্জের গজারিয়া পয়েন্টে বেড়ে গেছে মেঘনা নদীর পানি। পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের তথ্যমতে, গতকাল সকাল ৮টায় গজারিয়ায় পানি প্রবাহিত হচ্ছিল বিপৎসীমার ২২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. তাওহীদুল ইসলাম জানান, সিলেট ও চট্টগ্রাম বিভাগের বন্যাকবলিত জেলার পানি গোমতী নদী কিংবা ভাটি এলাকা হয়ে মেঘনার দিকে প্রবাহিত হচ্ছে। মূলত এর প্রভাবে মেঘনায় পানি বাড়ছে। এভাবে বাড়তে থাকলে আশপাশের নিচু এলাকায় বন্যার আশঙ্কা রয়েছে।

প্রতিবেদনটি তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন ফেনী, কুমিল্লা ও লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি এবং চট্টগ্রাম ব্যুরো

খবরটি শেয়ার করুন