বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৪:২০ অপরাহ্ন

সর্বশেষ :
শাকিবকে জড়িয়ে ধরে ‘ইমোশনাল’ পরীমণি মুক্তিযোদ্ধাদের স্বপ্নপূরণে সরকার অঙ্গীকারবদ্ধঃ ড. ইউনূস শেষ মুহূর্তে ভারতীয় দলে একাধিক পরিবর্তন ফের গাজায় যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব আটকে দিলো যুক্তরাষ্ট্র আগামী বছর জাতিসংঘে রোহিঙ্গা সংকটের টেকসই সমাধানে উচ্চ পর্যায়ের সম্মেলন এক যুগ পর বিকেলে সেনাকুঞ্জে যাচ্ছেন খালেদা জিয়া পলাশবাড়ীতে ওয়ালটন ফুটবল টুর্নামেন্টের ফাইনাল ম্যাচ ও পুরস্কার বিতরণী পলাশবাড়ীতে ২০ হাজার টাকা মূল্যে বিক্রয় নিষিদ্ধ স্যাম্পল ওষুধ জব্দ ঢাকার সড়কে অটোরিকশা চালকরা, বন্ধ যান চলাচল সশস্ত্র বাহিনী দিবসঃ শিখা অনির্বাণে রাষ্ট্রপতি ও প্রধান উপদেষ্টার শ্রদ্ধা

আজ যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন

আন্তর্জাতিক ডেস্কঃ বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাধর দেশ যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের দিকে তাকিয়ে আছে পুরো বিশ্ব। আজ মঙ্গলবার (৫ নভেম্বর) দেশটির প্রেসিডেন্ট নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। কমলা হ্যারিস নাকি ডোনাল্ড ট্রাম্প- কে হতে যাচ্ছেন যুক্তরাষ্ট্রের পরবর্তী প্রেসিডেন্ট? তা নিয়ে চলছে নানান জল্পনা-কল্পনা, মেলানো হচ্ছে নানান সমীকরণ।

যুক্তরাষ্ট্রের ৫০টি অঙ্গরাজ্য ও ওয়াশিংটন ডিসির ভোটাররা ভোট দেবেন। বিশাল বড় দেশ যুক্তরাষ্ট্রে ছয়টি টাইম জোন রয়েছে। ফলে বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যে সময়ের ব্যবধান রয়েছে। সেটি সমন্বয় করেই ভোট শুরু এবং শেষ হবে। ইতোমধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে ৭ কোটি ৮০ লাখ ভোটার আগাম ভোট দিয়েছেন।

নির্বাচনে প্রধান দুই প্রতিদ্বন্দ্বী কমলা হ্যারিস এবং ডোনাল্ড ট্রাম্প ছাড়াও আরও চারজন প্রার্থী লড়াই করছেন। তারা হলেন, গ্রিন পার্টির জিল স্টেইন, লিবার্টারিয়ান পার্টির চেজ অলিভার, স্বতন্ত্র প্রার্থী কর্নেল ওয়েস্ট ও রবার্ট কেনেডি জুনিয়র। তবে নির্বাচনে তারা তেমন বড় কোনো পার্থক্য করতে পারবেন না বলেই মনে করেন বিশ্লেষকরা।

এবারের নির্বাচনে যুক্তরাষ্ট্রে নতুন এক ইতিহাস রচিত হবে। কারণ যদি কমলা হ্যারিস জয়ী হন, ‍তাহলে তিনি হবেন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসের প্রথম নারী প্রেসিডেন্ট। অন্যদিকে দেশটির সাবেক প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প যদি জয়ী হন, সেক্ষেত্রে ইতিহাসে প্রথমবারের মতো এমন একজন ব্যাক্তিকে রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধান হিসেবে পাবে যুক্তরাষ্ট্র—যিনি ইতোমধ্যে ফৌজদারি মামলায় দোষীসাব্যস্ত হয়েছেন।

এই মুহূর্তে শেষ বেলার প্রচারণায় ব্যস্ত আছেন দুই প্রার্থী। গতকাল সোমবার ৭৮ বছর বয়সী ট্রাম্প নর্থ ক্যারোলাইনায় এক প্রচারণা সভায় বলেন, “আমি এমনকি ঠিকমতো ঘুমাতেও পারছি না। গত ৬২ দিনের একটি দিনও ছুটি নিই নি। যদি এই নির্বাচনে আমরা হেরে যাই, তাহলে সেটির দায় হবে একান্তই আমাদের। তবে যদি আমরা সব নাগরিকের ভোট নিশ্চিত করতে পারি, তাহলে আমাদের জয় কেউ আটকাতে পারবে না।

অপরদিকে, একই দিন পেনসিলভেনিয়া অঙ্গরাজ্যের অ্যালেনটাউনে এক প্রচারণা সভায় কমলা হ্যারিস বলেন, ‘ডেমোক্রেটিক পার্টির পক্ষে জনগণের সাড়া দেখে আমি অভিভূত। আমার বিশ্বাস নির্বাচনে আমি বিপুল ভোটে বিজয়ী হবো। এর আগে মিশিগান স্টেট ইউনিভার্সিটিতে ভাষণ দেন তিনি। মিশিগানে আরব বংশোদ্ভূত মার্কিন মুসলিম ভোটারদের কাছে টানতে তিনি বলেন, গাজা যুদ্ধ বন্ধে নিজের ক্ষমতার আওতায় সবকিছু করবেন তিনি।

যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনী প্রচারণার শুরুতে ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রার্থী ছিলেন বর্তমান প্রেসিডেন্ট ৮১ বছর বয়সী জো বাইডেন। তবে ট্রাম্পের সঙ্গে বিতর্কে খারাপ করার পর বয়সজনিত কারণে দলীয় চাপে তাকে সরে দাঁড়াতে হয়। গত জুলাইয়ে তার স্থানে আসেন ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিস।

যুক্তরাষ্ট্রের ৫০টি অঙ্গরাজ্যের ৪৩টিতে কমলা নাকি ট্রাম্প—কে জিতবেন, তা অনেকটা নিশ্চিত। সমস্যা দোদুল্যমান সাত অঙ্গরাজ্য—পেনসিলভানিয়া, অ্যারিজোনা, নেভাদা, উইসকনসিন, নর্থ ক্যারোলাইনা, মিশিগান ও জর্জিয়াকে নিয়ে। এই সাত অঙ্গরাজ্যের ফল কমলা–ট্রাম্পের ভাগ্য নির্ধারণ করে দেবে।

নানা জরিপের ফল বলছে, দুজনের লড়াই হবে হাড্ডাহাড্ডি। নির্বাচনে জয়–পরাজয় ঠিক করে দিতে পারে দোদুল্যমান সাত অঙ্গরাজ্য। তাই শেষ মুহূর্তে দুজন চষে বেড়িয়েছেন এসব অঙ্গরাজ্য।

২০২০ সালে জো বাইডেন ক্ষমতায় বসার সময় চলছিল করোনা মহামারি। তখন মহামারি পরিস্থিতি শক্ত হাতে সামলেছিল বাইডেন প্রশাসন। তবে এ করোনাই পরে গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়ায়। মার্কিন অর্থনীতিতে চাপ আসায় বেড়ে যায় দ্রব্যমূল্য, দেখা দেয় কর্মসংস্থানের অভাব। অভিবাসীদের নিয়েও শক্ত পদক্ষেপ নিতে পারেননি বাইডেন। এসবের জেরে তাঁর জনপ্রিয়তা কমতে থাকে।

মূলত এসব কারণেই বাইডেন ক্ষমতায় আসার কিছু সময় পর থেকে ডেমোক্র্যাটদের দীর্ঘদিনের আধিপত্য কমতে থাকে।

এবারের নির্বাচনী প্রচারে নামার পর ট্রাম্পকে দুবার হত্যাচেষ্টা করা হয়েছে। এটিও তার জনপ্রিয়তা কিছুটা বাড়াতে সহায়তা করেছে। তবে রোববার সংবাদমাধ্যম নিউইয়র্ক টাইমস–এর এক বিশ্লেষণে বলা হয়েছে, নানা ফৌজদারি মামলা ঘাড়ে নিয়ে চলা ট্রাম্প নির্বাচনে জিতলেও সে কৃতিত্ব তার নিজের হবে না। বাইডেন প্রশাসনের প্রতি মানুষের অসন্তোষই তার জয়ের পেছনে কাজ করবে।

সোমবার নিউইয়র্ক টাইমস–এর জনমত জরিপে দেখা গেছে, দেশজুড়ে ৪৯ শতাংশ মানুষ কমলা ও ৪৮ শতাংশ ট্রাম্পের প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন। এ ছাড়া দোদুল্যমান অঙ্গরাজ্যগুলোর মধ্যে পেনসিলভানিয়ায় ট্রাম্প ১ শতাংশ, অ্যারিজোনায় ৪ শতাংশ, নেভাদায় ১ শতাংশ, নর্থ ক্যারোলাইনা ও জর্জিয়ায় ১ শতাংশ ব্যবধানে এগিয়ে রয়েছেন। কমলা উইসকনসিনে ১ শতাংশ ও মিশিগানে ১ শতাংশ ব্যবধানে এগিয়ে রয়েছেন।

সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে স্থানীয় সময় ৫ নভেম্বর রাত বা ৬ নভেম্বর দিনের মধ্যে নির্বাচনের চূড়ান্ত ফলাফল জানা যাবে। তবে ঝামেলা হলে চূড়ান্ত ফল জানতে কয়েক দিন লাগতে পারে। যেমন ২০২০ সালের নির্বাচনে চার দিন পর চূড়ান্ত ফল জানা গিয়েছিল। সে বছর কয়েকটি অঙ্গরাজ্যে বাইডেন ও ট্রাম্পের মধ্যে তুমুল লড়াই হয়েছিল। আবার ২০১৬ সালে ৫ নভেম্বর রাতের মধ্যেই ফল জানা গিয়েছিল।

ভোটাররা মূলত ইলেকটোরাল কলেজ নির্বাচিত করবেন। আগামী ১৭ ডিসেম্বর তাদের ভোটে প্রেসিডেন্ট ও ভাইস প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হবেন। যুক্তরাষ্ট্রে মোট ইলেকটোরাল কলেজের ভোটের সংখ্যা ৫৩৮। প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হতে একজন প্রার্থীকে ২৭০টি ভোট পেতে হয়।

খবরটি শেয়ার করুন