বৃহস্পতিবার, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৫:৪৫ অপরাহ্ন
অগ্নিশিখা ডেস্কঃ বিশ্ব এইডস দিবস আজ রোববার (১ ডিসেম্বর)। বিশ্ব এইডস দিবসে এবারের প্রতিপাদ্য ‘অধিকার নিশ্চিত হলে, এইচআইভি/এইডস যাবে চলে’। দেশে গত এক বছরে (২০২৩ সালের নভেম্বর থেকে চলতি বছরের অক্টোবর) এইডসে মারা গেছেন ১৯৫ জন। এ বছর নতুন করে এইডসে আক্রান্ত হয়েছেন ১ হাজার ৪৩৮ জন। ১৯৮৯ সালে বাংলাদেশে প্রথম এইচআইভি (এইডসের ভাইরাস) পজিটিভ শনাক্তের পর এবার এইডসে আক্রান্তের সংখ্যা সর্বোচ্চ।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের জাতীয় যক্ষ্মা, কুষ্ঠ ও এইডস নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির (টিবি-এল অ্যান্ড এএসপি) সূত্রে এ তথ্য পাওয়া গেছে।
এইডসে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়লেও এ বছর এ রোগে মৃত্যুর সংখ্যা কমেছে। তবে বয়সে তরুণদের মধ্যে এ রোগে আক্রান্তের হার বেড়ে গেছে। বিবাহিতদের মধ্যে এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার হার বেশি।
এ ছাড়া মিয়ানমার থেকে বাস্তুচ্যুত হয়ে বাংলাদেশে আসা রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী এবং হিজড়াদের মধ্যেও সংক্রমণ কমছে না। তরুণ বয়সী এবং হিজড়া ও রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী ঝুঁকির মধ্যে আছে বলেও মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, দেশে ১৯৮৯ সালে এক ব্যক্তির এইচআইভি শনাক্ত হয়। এরপর প্রতিবছরই এইডসে আক্রান্ত ব্যক্তি পাওয়া গেছে। দু-এক বছর এইডসে আক্রান্ত ব্যক্তির সংখ্যা কমে গেলেও বেড়ে যাওয়ার প্রবণতাই ছিল বেশি। ২০২০ সালে করোনা সংক্রমণের বছর বাদ দিলে গত ১০ বছরে এইচআইভিতে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েছে। গত বছর আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ১ হাজার ২৭৬। সে অনুযায়ী, চলতি বছর ১৬২ জন রোগী বেড়েছে।
তরুণ বয়সী ও দুই ঝুঁকিপূর্ণ গোষ্ঠী নিয়ে ভাবনা
চলতি বছর নতুনভাবে আক্রান্তদের মধ্যে ৬৩ ভাগেরই বয়স ২৫ থেকে ৪৯ বছর। আর ২১ ভাগের বয়স ২০ থেকে ২৪ বছর। গত বছর এই তরুণ বা ১৯ থেকে ২৪ বছর বয়সীদের সংখ্যা ছিল ১৬ ভাগ।
এ বছর মোট আক্রান্তের মধ্যে ১০ শতাংশ রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী। গত বছর এ হার ছিল ১২ শতাংশ। মোট সংক্রমণের ১ শতাংশ হিজড়া। গত বছরও তাদের মধ্যে সংক্রমণের হার এমনই ছিল।
এই তিন গোষ্ঠীসহ সমকামী, নারী যৌনকর্মী, শিরায় মাদক সেবনকারীরাও এইচআইভির ক্ষেত্রে ঝুঁকিপূর্ণ বলে মনে করা হয়।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের টিবি-এল অ্যান্ড এএসপির লাইন ডিরেক্টর ডা. মো. মাহফুজার রহমান সরকার বলেন, ‘বৈশ্বিকভাবেই বয়সে নবীন জনগোষ্ঠী এইচআইভির ক্ষেত্রে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে বিবেচিত। আমাদের এখানেও এর ব্যতিক্রম হয়নি। আর মিয়ানমারে থাকতেই রোহিঙ্গাদের মধ্যে এইচআইভির সংক্রমণ ছিল অপেক্ষাকৃত বেশি। রোহিঙ্গাসহ হিজড়াদের মধ্যে আসলে আগের চেয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা বেড়েছে। তাই শনাক্তও হচ্ছে বেশি।’
জাতিসংঘের সংস্থা ইউএন এইডসের বাংলাদেশ কান্ট্রি ডিরেক্টর ডা. সায়মা খান বলেন, এইচআইভি আক্রান্ত ব্যক্তি শনাক্ত ও সেবার পরিধি বেড়েছে। তবে তরুণ জনগোষ্ঠীর মধ্যে সংক্রমণ বেড়ে যাওয়া রোধে প্রচারকাজ বাড়ানো যেতে পারে। আর পাঠ্যক্রমে এ বিষয়ে আরও সচেতনতামূলক বিষয় যুক্ত করা দরকার।
চলতি বছর যতজন এইডসে আক্রান্ত হয়েছেন, তাদের মধ্যে ৫৫ শতাংশই বিবাহিত। আর অবিবাহিত রয়েছেন ৪০ শতাংশ। বিধবা বা তালাকপ্রাপ্ত রয়েছেন ৫ শতাংশ।
গত বছর বিবাহিতদের মধ্যে সংক্রমণের হার ছিল ৬০ শতাংশ। আর অবিবাহিতদের মধ্যে তা ছিল ৩১ শতাংশ। গত বছরের মতো এবারও ঢাকা বিভাগে সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হয়েছে এইচআইভিতে।
গত বছর এইচআইভিতে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর সংখ্যা ছিল ২৬৬। এবার এ সংখ্যা ১৯৫। মৃত্যুর সংখ্যা কমে গেলেও তা এখনো শঙ্কাজনক পর্যায়ে আছে বলেই মনে করেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) সাবেক উপাচার্য নজরুল ইসলাম। এই ভাইরোলজিস্ট বলেন, এখন এইচআইভির চিকিৎসার ব্যবস্থা যথেষ্ট উন্নত। তারপরও এত মৃত্যু মেনে নেওয়া যায় না। মৃত্যুর কারণ হতে পারে নিয়মিত এবং যথাযথ চিকিৎসা নিচ্ছেন না আক্রান্ত ব্যক্তিরা। আবার যেসব ওষুধ দেওয়া হচ্ছে, তা প্রতিরোধী হয়ে উঠছে কি না, সে বিষয়েও নজর দেওয়া দরকার।
দেশের প্রায় সব জেলা সদরের সরকারি হাসপাতালে এইচআইভি সংক্রমণ পরীক্ষার সুযোগ থাকলেও উপজেলা হাসপাতালে তা নেই। উপজেলা পর্যায়ে এইচআইভি পরীক্ষার ব্যবস্থা করা দরকার বলে মনে করেন অধ্যাপক নজরুল ইসলাম।