বৃহস্পতিবার, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৬:৩৬ অপরাহ্ন
শেখ আব্দুল্লাহ আল মামুন, তালাউপজেলা প্রতিনিধিঃ সাতক্ষীরার তালায় বলুয়ার টপ বাওড় ১ বছরের জন্য ইজারা দিয়ে ১ লক্ষ ৭০ হাজার টাকা ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে নাজির নুরুল আমিন ও নায়েব আশরাফুজ্জামাননের বিরুদ্ধে।
এদিকে ১ বছরের ইজারা নিয়ে কয়েক মাস যেতে না যেতেই অন্য ব্যক্তিকে বেশি দামে দিতে উক্ত জলমহালটি উন্মুক্ত করার নামে বর্তমান তালা উপজেলা সহকারী কমিশনার ভূমি আবদুল্লাহ আল-আমিন ও নায়েব আশরাফুজ্জামানের বিরুদ্ধে মাছ লুট করার অভিযোগ তুলেছেন ইজারাদার ইউপি সদস্য ইন্দ্রজিত বৈরাগী।
এঘটনায় ভুক্তভোগী ঐ ইউপি সদস্য প্রতিকার পেতে সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক, খুলনা বিভাগীয় কমিশনারসহ বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ করেও কোন বিচার পাচ্ছেন না তিনি।
সরোজমিনে গিয়ে ও লিখিত অভিযোগে জানাযায়, সোনাবাদাল মৌজার, জে,এল নং- ২৬, খতিয়ান নং- ০১,দাগ নং- এস,এ ২০২, আর,এস ২৯৫, জমির পরিমান ১০ একর বলুয়া বাওড় টপ জলমহালটি তালা উপজেলার ১০ নং – খেশরা ইউনিয়ন পরিষদের ১ নং- ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মেশেরডঙ্গা গ্রামের মৃত অন্নদা বৈরাগীর পুত্র ইন্দ্রজিত বৈরাগীর নামে বাংলা ১৪৩১ সনের জন্য খাস কালেকশন দেখিয়ে ১ লক্ষ ৭০ হাজার টাকা নিয়ে ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা(ভারপ্রাপ্ত) মোঃ আশরাফুজ্জামানের স্বাক্ষরে অনুমতি দেওয়া হয়।
এই অনুমতি পত্র পেয়ে উক্ত বাওড়ে মাছ চাষ শুরু করেন ইন্দ্রজিত। এদিকে ঘুষখোর নায়েব আশরাফুজ্জামান ধান্দা খুজতে থাকে, এক পর্যায়ে অন্য ব্যক্তিকে ম্যানেজ করে মোটা অংকের টাকা চুক্তি করে তার নিকট থেকে নগদ ৭০ হাজার টাকা ঘুষ নিয়ে পরিকল্পনা আঁটতে থাকে তাকে বাওড়টি দেওয়ার জন্য।
এক পর্যায়ে ইন্দ্রজিতকে কোন প্রকার নোটিশ ছাড়ায় উপরের নির্দেশ আছে বলে নায়েব আশরাফুজ্জামান বর্তমান সহকারী কমিশনার ভূমি আবদুল্লাহ আল- আমিনকে নিয়ে নেট- পাটা অপসারণের নামে উক্ত বাওড়ে জেলে দিয়ে বেড় জাল ফেলে বাগদা- গলদাসহ বিভিন্ন প্রজাতির মাছ মেরে নিয়ে এসেছে বলে এলাকাবাসী জানিয়েছে।
বিষয়টি নিয়ে ভুক্তভোগী ইন্দ্রজিত বৈরাগী জানান, আমি বলুয়ার বাওড় টপ ইজারা নেওয়ার জন্য প্রথমে খেশরা নায়েব আশরাফুজ্জামানকে বলি তিনি আমাকে বলেন আমার নিকট ১ লক্ষ ৭০ হাজার টাকা দিলে আমি আপনাকে বাওড়টি নেওয়ার ব্যবস্থা করে দিব। আমি ১ লক্ষ ৭০ হাজার টাকা ম্যানেজ করে পাটকেলঘাটা এ্সিল্যান্ড অফিসে এসে নায়েব আশরাফুজ্জামানের নিকট পুরো টাকা দিয়ে দিই সেখানে নাজির নুরুল আমিন ও উপস্থিত ছিলেন। উনারা বলেন সারের সাথে কথা হয়েছে সারকে টাকা দিলেই কাজ হয়ে যাবে। আমি টাকা দিয়ে বাড়িতে চলে আসি।
কিছু দিন পর নায়েব আশরাফুজ্জামান আমাকে দেখা করতে বলেন,আমি দেখা করলে নায়েব বাংলা ১৪৩১ সনের ১ বছরের জন্য বাওড়টি আমাকে মাছ চাষ করার জন্য অনুমতিপত্র দেন, সেখান থেকে আমি মাছ চাষ শুরু করি।
কয়েক মাস যেতে না যেতেই নায়েব আশরাফুজ্জামান আমাকে ফোন দিয়ে বলে উপরের নির্দেশ আছে বাওড়টি উন্মুক্ত করতে হবে। তখন আমি বলি ওখানে তো আমার ৭/৮ লক্ষ টাকার মাছ ছাড়া রয়েছে আর আপনারা তো আমার নিকট থেকে ১ লক্ষ ৭০ হাজার টাকা নিয়েছেন, আমার এত বড় ক্ষতি করবেন না আমি একেবারেই পথে বসে যাবো। আরও যদি কিছু টাকা লাগে আমি দিবো।
তখন নায়েব আশরাফুজ্জামান বলেন আমরা কাগজে কলমে উন্মুক্ত দেখাবো আপনি যে ভাবে আছেন সেই ভাবে থাকবেন।
কিন্তু এর দুই দিন পর বর্তমান সহকারী কমিশনার ভূমি আবদুল্লাহ আল- আমিনের নেতৃত্বে আমাকে কিছুই না জানিয়ে খাল উন্মুক্ত করার নামে জেলে দিয়ে বেড় জাল টেনে ২ দিন ধরে মাছ মেরে লুট করে নিয়ে গেছে। আমাকে নায়েব আশরাফুজ্জামান ধ্বংস করে দিয়েছে।
এদিকে খেশরার সাবেক নায়েব আশরাফুজ্জামান ১ লক্ষ ৭০ হাজার টাকা দিয়ে বলুয়ার টপ খাল ইজারা দিলেও পরে নতুন করে উন্মুক্ত করে স্হানীয় শম্ভু নাথের মাধ্যমে নতুন করে ইজারা দিবেন বলে এক মেম্বারের নিকট থেকে ৭০ হাজার টাকা নিয়ে তালা এসিল্যাণ্ড এর মাধ্যমে উন্মুক্ত করে আংশিক দখল দিয়েছে বলে জানা যায়।
এদিকে এই রিপোর্ট সংগ্রহের সময় ভুক্তভোগী ইজারাদার ইন্দ্রজিতের মোবাইল ফোনে নায়েব আশরাফুজ্জামানের সাথে কথাপোকথনে শুনা যায়, আশরাফুজ্জামান বলছেন, আমি তো কাগজ করে দিয়েছি, নতুন স্যার উন্মুক্ত করেছে এখন আমি কি করব,তখন ইন্দ্রজিত বলছেন আমার টাকা ফেরত দিয়ে দিন, না হলে আপনার নামে মামলা করব, তখন নায়েব ফোন কেটে দেন।
ইন্দ্রজিত বলেন, আমার প্রশ্ন যদি বাওড়টি উন্মুক্ত করা হয়ে থাকে তাহলে এলাকার অসহায় মানুষ মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করবে এ্সিল্যান্ড কেন মাছ ধরে নিয়ে যাবে? আর এই মাছ গেলো কোথায়? এ ঘটনায় আমি বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ করেও কোন প্রতিকার পাচ্ছি না। আমি উদ্ধর্তন কর্তৃপক্ষের নিটক ক্ষতিপূরণসহ বিচার দাবী করছি।
ঘটনার বিষয়ে ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা আশরাফুজ্জামানের নিকট জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি কোন টাকা নেয়নি,এসিল্যান্ড সার আমাকে মাছ ধরার জন্য নিয়ে গিয়েছিল।
বিষয়টি সম্পর্কে তালা উপজেলা সহকারী কমিশনার ভূমি অফিসের নাজির নুরুল আমিনের নিকট জানতে চাইলে তিনি বলেন, টাকা নেওয়ার বিষয়ে আমি কিছুই জানিনা।আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ করা হচ্ছে।
ঘটনার বিষয় নিয়ে বর্তমান তালা উপজেলা সহকারী কমিশনার ভূমি আবদুল্লাহ আল- আমিনের নিকট জানতে চাইলে তিনি বলেন, জনসাধারণের ব্যবহারের জন্য খালটি উন্মুক্ত করা হয়েছে। মাছ ধরার বিষয়টি জানতে চাইলে তিনি এড়িয়ে যান।
উক্ত ঘটনার বিষয়ে সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক মোস্তাক আহমেদ এর নিকট জানতে 01715212277 নাম্বারে বার বার রিং দিলেও তিনি রিসিভ না করায় বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।