বুধবার, ১৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৬:১৬ অপরাহ্ন

সর্বশেষ :

কক্সবাজার নাফনদীতে আরোপিত নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার

কহিনুর আক্তার- জেলা প্রতিনিধি কক্সবাজারঃ মিয়ানমারের সংঘাতের জের ধরে চলাচল পরিস্থিতিতে বুধবার থেকে কক্সবাজারের টেকনাফের নাফনদীতে আরোপিত নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা হয়েছে। তবে টেকনাফের কোন নৌযান যেন বাংলাদেশের জলসীমা অতিক্রম করে মিয়ানমারের জলসীমায় না যায় তার জন্য গ্রহণ করা হয়েছে বিশেষ সতর্কতা। একই সঙ্গে জরুরি প্রয়োজনে টেকনাফ সেন্টমার্টিন নৌ রুটে যাত্রীবাহি নৌ যান কোস্টগার্ডের নিরাপত্তায় চলাচল করবে।

শুক্রবার বিকালে এমন সিদ্ধান্ত গ্রহণের কথা নিশ্চিত করেছেন টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ এহেসান উদ্দিন।

তিনি জানিয়েছেন, নাফনদীতে দীর্ঘদিন ধরে মাছ ধরা বন্ধ রয়েছে। তা গত সরকারের আমল থেকে কার্যকর। এখনও নাফনদীতে মাছ ধরা বন্ধ থাকবে। তবে নাফনদী দিয়ে সমুদ্রগামি মাছ ধরার ট্রলার যাতায়াত করতে পারবে। এক্ষেত্রে কোন ভাবেই যেন বাংলাদেশেরর জলসীমা অতিক্রম করে মিয়ানমারের কাছা-কাছি না যায় তার জন্য বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করা হচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে ট্রলার মালিক, জেলেদের সাথে আলোচনা হয়েছে। টেকনাফ সেন্টমার্টিন নৌ রুটে যাত্রীবাহি নৌ যান চলবে কোস্টগার্ডের নিরাপত্তায়। এর জন্য সকল নিদের্শনা প্রদান করা হয়েছে।

গত ৮ ডিসেম্বর বাংলাদেশের সাথে মিয়ানমারের সীমান্তবর্তী রাখাইন রাজ্যের মংডু শহরও শতভাগ নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে বিচ্ছিন্নতাবাদি গোষ্ঠী আরাকান আর্মি। এর পর নাফনদীর মিয়ানমারের অংশে অনির্দিষ্টকালের জন্য নৌ চলাচলে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে বিবৃতি প্রকাশ করে আরাকান আর্মি।

তাদের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, আরাকান আর্মি সফলভাবে রাখাইন রাজ্যের মংডু অঞ্চলের সামরিক জান্তার বর্ডার গার্ড পুলিশ ডিভিশনের (৫ নম্বর) শেষ অবশিষ্ট ফাঁড়িটি দখল করে এবং নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে। এতে সামরিক জান্তার সশস্ত্র সদস্য, তাদের সহযোগী আরএসও, আরসা, এআরএ সদস্যরা এখনও এলাকা ছেড়ে পালিয়ে যাচ্ছে। তারা অতর্কিত হামলা অব্যাহত রেখেছে। যা শুধুমাত্র ৫ নম্বর ব্যাটালিয়নের কাছাকাছি এলাকায় নয়। মংডু অঞ্চলের অন্যান্য অংশেও এমন হামলা হচ্ছে। তাই সামরিক প্রয়োজনীয়তা এবং জননিরাপত্তা সংক্রান্ত উদ্বেগের কারণে নাফ নদীতে (রাখাইন প্রান্তে) সমস্ত নদী পরিবহন অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত করা হয়েছে।

এই পরিস্থিতিতে বুধবার টেকনাফ-সেন্টমার্টিন নৌপথসহ এবার নাফনদীর বাংলাদেশ অংশেও সকল নৌযান চলাচল অনির্দিষ্টকালের জন্য নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে টেকনাফ উপজেলা প্রশাসন। বৃহস্পতিবার নিষেধাজ্ঞা থাকলেও সেন্টমার্টিনে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য পৌঁছাতে বিশেষ উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়। যার অংশ হিসেবে কোস্টগার্ডের নিরাপত্তায় সেন্টমার্টিন গেছে পণ্যবাহী সাতটি ট্রলার। আর শুক্রবার এই নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে নতুন সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছেন টেকনাফের ইউএনও।

এদিকে মিয়ানমারের মংডু শহর নিয়ন্ত্রণের পর কোন শব্দ শোনা না গেলেও বৃহস্পতিবার রাত থেকে গোলাগুলির শব্দ শোনা যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন টেকনাফের সীমান্তবর্তী এলাকার মানুষ।

সীমান্ত এলাকার লোকজন জানিয়েছেন, আগের মতো বিস্ফোরণের বিকট কোন শব্দ শোনা যাচ্ছে না। তবে গোলাগুলির শব্দ অব্যাহত রয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, স্থলভাগে বিশেষ কিছু নিয়ে গোলাগুলি হচ্ছে। এক্ষেত্রে আরাকান আর্মির নিয়ন্ত্রিত এলাকায় মিয়ানমারের জান্তা বাহিনী বা তাদের সমর্থিত রোহিঙ্গা গোষ্ঠি আত্মগোপনে থাকা স্থান ঘিরে এমন গোলাগুলি বলে নানাভাবে শোনা যাচ্ছে।
টেকনাফের সাবরাং ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য আবদুস সালাম জানিয়েছেন, সোমবার থেকে কোন শব্দ শোনা যায়নি।

বৃহস্পতিবার রাত থেকে শুক্রবার দুপুর পর্যন্ত গোলাগুলির শব্দ শোনা যাচ্ছে। তবে তা আগের মতো বিকট না।

সাবারাং ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য শরীফ আহমদ জানিয়েছেন, শাহপরীরদ্বীপের জালিয়াপাড়ার পূর্বে মিয়ানমারের মগনীপাড়া, পতুংজা পাড়া, সাবারং এর আচারবুনিয়া এলাকার পূর্বে মিয়ানমারের সুধাপাড়া, উকিল পাড়া, সিকদার পাড়া, ফয়েজীপাড়া এলাকা থেকে আসছে এসব গোলাগুলির শব্দ।
টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ এহেসান উদ্দিন জানিয়েছেন, স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা গোলাগুলির শব্দ শুনেছেন বলে জানিয়েছেন। তা মিয়ানমারের অভ্যন্তরে এবং সেটা বিকট না।

এমন পরিস্থিতিতে নাফনদীর বাংলাদেশ অংশে টহল জোরদার রয়েছে বলে জানিয়েছেন বিজিবির টেকনাফস্থ ২ ব্যাটালিয়নের ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক মেজর সৈয়দ ইশতিয়াক মুর্শেদ।

খবরটি শেয়ার করুন

© All rights reserved © 2024 thedailyagnishikha.com
Design & Developed BY Hostitbd.Com