বুধবার, ০৮ জানুয়ারী ২০২৫, ০৮:৩২ অপরাহ্ন
বিশেষ প্রতিনিধিঃ নারায়ণগঞ্জের পাঁচটি আসনের মধ্যে সবচেয়ে জনবহুল ও ভোটের মাঠে গুরুত্বপূর্ন আসন বলা হয় নারায়ণগঞ্জ-৪ তথা ফতুল্লা সিদ্ধিরগঞ্জ অঞ্চলকে। ঢাকা লাগোয়া অঞ্চলের পাশাপাশি অর্থনৈতিক, বাণিজ্যিক এবং শিল্পনগরী হয়ে ওঠায় এই আসনের দিকে নজর থাকে সবসময়।
বলা হয়, নির্বাচনে যেই দল নারায়ণগঞ্জ-৪ আসন জয় ছিনিয়ে নেয়, তারাই গঠন করে সরকার। রূপক অর্থে এই মন্তব্য করা হলেও বাস্তবেও ঘটে এটি। নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনে বিএনপির বেশ কয়েকজন এমপি হিসেবে বিগত সময়ে জয়লাভ করেছেন। ১৯৯১ সালে এই আসনে জয় পেয়েছিলেন মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার সিরাজুল ইসলাম। ১৯৯৬ সালে তিন মাসের জন্য এমপি হয়েছিলেন মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মোহাম্মদ আলী, ২০০১ সালে নির্বাচিত হয়েছিলেন গিয়াস উদ্দিন। এরপর থেকেই এই আসনটি বিএনপির হাতছাড়া। ২০১৮ সালে আসনটি ছেড়ে দেয়া হয় দলের জোট শরিক জমিয়তে উলামায়ে ইসলামকে। আওয়ামী লীগ সরকারকে পদচ্যুত করার পর থেকেই জাতীয় রাজনীতিতে চলছে ভোটের রোডম্যাপ বা দিনক্ষণ জানার তাগাদা। সেই সাথে স্থানীয় পর্যায়ে কোন কোন নেতারা কোন এলাকায় নির্বাচন করতে আগ্রহী তা নিয়েও চলছে জল্পনা কল্পনা।
তবে সাম্প্রতিক সময়ে এই অঞ্চলের নির্বাচনী লড়াই করতে পারেন এমন নেতাদের কর্মকান্ড দেখে শঙ্কা তৈরি হয়েছে বিএনপির নেতাকর্মীদের মধ্যে। কারণ যারা যোগ্য তাদের বড় অংশই হয় জড়িয়ে যাচ্ছেন বিতর্কে, অথবা নিষ্ক্রিয় ভুমিকায় অবতীর্ন হয়েছেন। যে কারণে এই আসনটি ফের হাতছাড়া হয়ে যেতে পারে বিএনপির এমন শঙ্কা করছেন দলের কর্মীরা। খোঁজা নিয়ে জানা যায়, ২০২২ সাল থেকে বিএনপির রাজনীতিতে রাজকীয়ভাবে প্রত্যাবর্তন করা জেলা বিএনপির সভাপতি গিয়াস উদ্দিনকে নিয়ে জল্পনা কল্পনা তৈরি হয়। গুঞ্জন রটে, গিয়াস অংশ নিতে পারেন ২০২৪ সালের নির্বাচনে। সেসময় শামীম ওসমানের মাথাব্যাথার কারণ হয়ে দাঁড়ান গিয়াস উদ্দিন। নির্বাচনের মনোনয়ন ক্রয়কালে উঠে এসেছিলো গিয়াস উদ্দিনেরও নাম। কিন্তু নির্বাচনে আর অংশ নেননি তিনি। ৫ আগস্টের পর গিয়াস উদ্দিন আবারও নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের এমপি হবেন এমন স্বপ্ন বুনতে শুরু করলেও অল্পদিনেই বিতর্কে জড়িয়ে যান তিনি সহ তার অনুসারীরা। বিএনপিতে তৈরি হয় ফাটল। তার এককালের অনুসারীরাই তার বিরুদ্ধে অবস্থান নেন। একাধিক বিতর্কিত কর্মকান্ডে দলের কাছেও প্রশ্নবিদ্ধ হন। যার কারণে জেলা বিএনপি এবং জেলা কৃষকদলের কমিটি বাতিল করে দেয় কেন্দ্র। শুধু গিয়াস উদ্দিন একা নন। নারায়ণগঞ্জ ৪ আসনে এমপি হতে পারেন এমন নেতা হিসেবে বিগত সময়ে আলোচিত ছিলেন ব্যবসায়ী নেতা শাহ আলম এবং জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক মামুন মাহমুদ। কিন্তু শাহ আলম বর্তমানে নিষ্ক্রিয় বলা চলে। অন্যদিকে মামুন মাহমুদ সেভাবে নিজেকে মেলে ধরতে পারেননি নেতাকর্মিদের সামনে। সাংগঠনিক গোছানোতেও পিছিয়ে আছেন অন্যদের তুলনায়। সব মিলিয়ে এই আসনে বিএনপির হাল ধরার মত আর কাউকে পাওয়া যাচ্ছে না।
সিদ্ধিরগঞ্জে বিএনপির সাবেক একজন কাউন্সিলর বলেন, ‘এটা পরিস্কার হয়ে গেছে যে নারায়ণগঞ্জ ৪ আসনে গিয়াস উদ্দিন মনোনয়ন পাচ্ছেন না। তিনি হয়তো সিটি করপোরেশন নির্বাচনের দিকে মনোনিবেশ করতে পারেন। দলের সামনে তার যেই চিত্র উত্থাপিত হয়েছে তাতে তার উপর দলের বড় অংশই এখন আর সন্তুষ্ট নয়। আওয়ামী লীগ পতনের পাঁচ মাসের মধ্যেই দল থেকে ছিটকে পরা তার প্রতি অন্যতম সিগন্যাল। যা তিনি তার নিজ কর্মের কারনে হারিয়েছেন।’ জেলা বিএনপির সাবেক এক যুগ্ম আহবায়ক বলেন, নারায়নগঞ্জ ৪ আসন গুরুত্বপুর্ন। কিন্তু এখানে প্রতিযোগিতাও বেশি। একজন বা দুজন নয়, একাধিক প্রার্থী দাঁড়িয়ে যাবে। আবার এখানে বিএনপির সব নেতারই অবস্থান প্রয়োজন। একজন এমপি হলে বাকিদের অবনমন করে রাখার প্রবনতা দিনশেষে দলের জন্য ক্ষতির কারন হবে। এর বদলে বিএনপির পক্ষ থেকে এই আসনটি জোটভুক্ত দলের কাছে দিয়ে দেয়া হতে পারে। এতে দলও থাকবে সুসংগঠিত। স্থানীয় এমপিও যা ইচ্ছা তাই করতে পারবেন না।