শনিবার, ১১ জানুয়ারী ২০২৫, ০৬:৪৯ অপরাহ্ন
বিশেষ প্রতিনিধিঃ সাব্বির হত্যা মামলায় জেলা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি জাকির খান বেকসুর খালাস পাওয়ার পর প্রতিক্রিয়া এসেছে মামলার বাদী ও নিহতের ভাই অ্যাডভোকেট তৈমূর আলম খন্দকারের কাছ থেকে। তিনি বলেন, এদেশে অনেক গুরুত্বপূর্ণ মামলায় সাক্ষীর অভাবে সুষ্ঠু বিচার হয় না। সাক্ষীরা নিজের জীবনের ঝুঁকি চিন্তা করে সন্ত্রাসীর বিরুদ্ধে কোনো সাক্ষ্য দিতে চায় না। আমার ছোট ভাই সাব্বির আলম ব্যবসায়ীদের স্বার্থ নিয়ে লড়তে গিয়ে নিজের জীবন হারান। তখন ব্যবসায়ীরা সাব্বিরের পক্ষে আন্দোলন করলেও এখন বিকেএমইএ’র শীর্ষ পদে যারা রয়েছেন তারাই এখন এই সন্ত্রাসীদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে ঝুটের ব্যবসা করছেন। দেশের বর্তমান বিচার বিভাগের কর্মকান্ড সবারই জানা।
আমাদের দেশের সুপ্রিম কোর্টও রাজনৈতিক বিবেচনায় চলে। রাজনৈতিকভাবেই সিদ্ধান্ত নেয়। এখন আমরা ক্ষমতায় নাই তাই এ নিয়ে চিন্তা করার কি আছে? তবে আমি দেখছি এটা নিয়ে আর কি করা যায়। আমি এর আগে একাধিকবার বলেছিলাম সাব্বির হত্যার বিচার না হলে বাংলাদেশের আর কেউ সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে কথা বলবে না। সাব্বির সন্ত্রাসীর বিরুদ্ধে কথা বলাতেই মৃত্যু বরণ করে নিতে হয়েছিল তার। অন্যসব নেতারা সন্ত্রাসীদের সঙ্গে আপস করলেও আমার ছোট ভাই কখনো আপোষ করে নাই। এটাই আমাদের স্বান্তনা। অন্যসবাই শুধু মুখে মুখে সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে কথা বললেও সাব্বির মন থেকে সন্ত্রাসীর বিরুদ্ধে কথা বলেছিল। আজ যে রায় দেওয়া হলো আগামীতে মানুষ আর সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে কথা বলার সাহস পাবে না। এই রায় নিয়ে কোনো রাজনৈতিক দল, ব্যবসায়ী নেতারা কোনো কথা বললো না। তা সত্যিই কষ্টদায়ক।
সাব্বির আলম খন্দকারের মেয়ে অ্যাডভোকেট ফাতেমা তুজ জোহরা শবনম বলেন, আমার বাবার কাছে জাকির খানের সকল কুকর্ম ও অনৈতিক কাজে রেকর্ড ছিল। এই কারণেই আমার বাবাকে হত্যা করা হয়। আমার বাবা খুবই স্পষ্টভাষী ও সৎ সাহসী লোক ছিল। নারায়ণগঞ্জের লোকজন তাকে টাইগার বলতো। কারণ আমার বাবার মতো সাহস আর কারো ছিল না। আমার বাবা সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে কথা বলেছে বলেই আমার বাবা আমাদের মাঝে নেই।
২০০২ সালের ২২ অক্টোবর নারায়ণগঞ্জকে সন্ত্রাস, চাঁদা ও মাদক মুক্ত করার জন্য নারায়ণগঞ্জ চেম্বার অব কর্মাসে অনুষ্ঠিত জেলার ৩২ টি ব্যবসায়ী সংগঠনের সাথে সেনাবাহিনীর মত বিনিময় সভায় শহীদ সাব্বির আলম খন্দকার “আমার জানাযায় অংশ গ্রহন করার আহবান জানিয়ে বক্তব্য শুরু করছি” বলে নারায়ণগঞ্জের সন্ত্রাসী ও মাদক ব্যবসায়ীদের নাম, ঠিকানা ও তাদের গডফাদারদের নাম প্রকাশ করেন এবং সন্ত্রাসী ও মাদক ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে জিহাদ ঘোষণা করে নারায়ণগঞ্জবাসীকে ঐক্যবদ্ধ করার চেষ্টা করেন। তখন শহীদ সাব্বিরের ব্যাপক তৎপরতায় ঝুট সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজ ও মাদক ব্যবসায়ীদের হাতে জিম্মি গার্মেন্টস ব্যবসায়ী, চুন ফ্যাক্টরী ও নারায়ণগঞ্জবাসী নিস্তার লাভ করে। ওই বক্তব্য প্রদানের কয়েকদিন পর ১৮ ফেব্রুয়ারী শহরের মাসদাইর এলাকায় নিজ বাড়ির অদূরে আততায়ীদের গুলিতে তিনি নিহত হন।
বিএনপির একজন ব্যবসায়ী জানান, ২০০৩ সালে মূলত গার্মেন্ট মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএ এর যাত্রা মাত্র শুরু হয়। তখনই বিভিন্ন কারখানাতে গিয়ে বিএনপির লোকজন ঝুট নামানোকে কেন্দ্র করে বিরোধে জড়িয়ে পড়ে। এতে করে তখন বিকেএমইএ এর সহ সভাপতির পদে থাকা সাব্বিরকেও বেশ বেগ পোহাতে হয়। সে কারণেই তিনি ওই বছরের শুরুতে অপারেশন ক্লিন হার্ট চলাকালে সেনাবাহিনীর কর্মকর্তা সহ প্রশাসনের কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে বক্তব্য রাখেন। ২০০৩ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি আলোচিত ব্যবসায়ী সাব্বির আলম খন্দকার হত্যা মামলায় তার বড় ভাই অ্যাডভোকেট তৈমূর আলম খন্দকার বাদি হয়ে ফতুল্লা মডেল থানায় মামলা দায়ের করেন। মামলায় প্রথমে ৭ জনকে এজাহারনামীয় আসামী করা হয়। ওই মামলায় জেলা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি জাকির খানের নাম ছিলনা। পরে জাকির খানসহ ৮ জনের নামে আদালতে চার্জশীট দাখিল করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা। ৫২ জন সাক্ষীর মধ্যে ২১ জন সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে আদালত জাকির খানসহ সকল আসামীকে বেকসুর খালাস প্রদান করেছেন।