বৃহস্পতিবার, ১৬ জানুয়ারী ২০২৫, ১১:০৬ অপরাহ্ন
বিশেষ প্রতিনিধিঃ এক বছর অতিবাহিত হলো ৪২ লাখ টাকার ঘুষকান্ডের ঘটনায় । আর ওই টাকা নিয়ে খোদ তৎকালীন প্রভাবশালী সংসদ সদস্য শামীম ওসমান নিজেও মূল ঘটনাকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করতে জেলা প্রশাসক মাহমুদুল হক ও জেলা দুদককে প্রশ্নে মুখে ফেলে ফায়দা হাসিলের অপচেষ্টাও করেন।
কিন্ত ধর্মের কল বাতাসে নড়ে । পাপের কারণে দেশ ছেড়ে পলাতক সেই অপরাধী চক্র তানভীর আহমেদ টিটু ও তার গডফাদার ভগ্নিপতি শামীম ওসমানসহ সকল অপরাধীদের।
তবে ওই ঘুষের টাকার মূল হোতা তানভীর টিটু পালিয়ে গেলেও ঘুষ বহনকারী সেই এস এম রানা পালাতে না পেরে এখনো রয়েছে প্রকাশ্যে ও প্রভাবশালীদের ছাত্রছায়ায় ।
ঠিক কাটায় কাটায় ওই ৪২ লাখ টাকার ঘুষকান্ডের এক বছরের মধ্যে জেলা প্রশাসক মাহমুদুল হক ২০২৪ সালের এই সময়ে ৪২ লাখ টাকা সহ আটকের ঘটনায় দীর্ঘক্ষন আটকে রেখে জিজ্ঞাসাবাদ করেন নারায়ণগঞ্জ ক্লাবের তৎকালীন সহ সভাপতি ও টিটুর অন্যতম ক্যাশিয়ার নিতাইগঞ্জের ড্রাইভাবপুত্র এসএম রানাকে।
সেই রানাকে আটকের পর নানাভাবে প্রচন্ড চাপ প্রয়োগ করে শামীম ওসমান ও তার শ্যালক নানা অপরাধের মাস্টারমাইন্ডার তানভীর টিটু নিজের দোষ আড়াল করতে রানাকে ছাড়িয়ে আনেন জেলা প্রশাসকের দপ্তর থেকে।
এমন চাঞ্চল্যকর ঘটনার এব বছর অতিবাহিত হলেও জেলা প্রশাসক মাহমুদুল হক কাটায় কাটায় ওই ঘটনার পূর্তিতে নারায়ণগঞ্জ থেকে বদলী হয়ে চলে গেলেও মুখ খুললেন না ন্যাক্কারজনক ওই কর্মকান্ডের। ফলে অজানাই রয়ে গেলো টিটু কেলেংকারীর অধ্যায়।
জানা যায়, নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে থেকে ৪২ লাখ টাকা উদ্ধারের ঘটনায় দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) এক মামলায় এই কার্যালয়ের সার্ভেয়ারকে গ্রেপ্তার করা হয় বৃহস্পতিবার (১৮ জানুয়ারি) দুপুরে। এর পূর্বে ২০২৪ সালের ১৬ জানুয়ারী ৪২ লাখ টাকা ঘুষকান্ডের ঘটনায় মামলা করে দুদক । যা নিশ্চিত করেছিলো দুদকের জনসংযোগ কর্মকর্তা আক্তারুল ইসলাম।
ওই সময় গ্রেপ্তার হয় সার্ভেয়ারের কাওসার আহমেদ (৪৩)। যিনি জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের ভূমি অধিগ্রহণ শাখায় কর্মরত।
গ্রেপ্তারের পর ১৮ জানুয়ারী বিকেলে আদালতে তোলা হলে আদালত কাওসার আহমেদকে কারাগারে প্রেরণের নির্দেশ দেন বলে জানান জেলা আদালতের পুলিশ পরিদর্শক মো. আসাদুজ্জামান।
ওই ঘুষকান্ডের ঘটনায় দুদক জানায়, ২০২৪ সালের ১০ জানুয়ারি রাত দশটার দিকে নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে থেকে সিদ্ধিরগঞ্জ রাজস্ব সার্কেলের প্রাক্তন আউটসোর্সিং কর্মচারী জাহিদুল ইসলাম সুমন (২৮) একটি কার্টনসহ নিরাপত্তা কর্মীদের হাতে আটক হন। জেলা প্রশাসকের নির্দেশে ওই কার্টন খুলে টাকা গুনে ৪২ লাখ টাকা পায়। পরে জেলা প্রশাসক ও এনডিসির কাছে হস্তান্তরেরপরে ফতুল্লা মডেল থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করে টাকাগুলো জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের কোষাগারে জমা রাখা হয়।
জব্দ করা ৪২ লাখ টাকার সাথে দুর্নীতির সম্পৃক্ততা আছে ধারণা করে গত ১৪ জানুয়ারি জেলা প্রশাসক মাহমুদুল হক দুর্নীতি দমন কমিশনে চিঠি দেন। পরে ১৬ জানুয়ারি দুদক তাদের জেলা কার্যালয়ে মানি লন্ডারিং, দুর্নীতি প্রতিরোধ আইন ও দন্ডবিধির কয়েকটি ধারায় একটি মামলা করে। ওই মামলায় জাহিদুল ইসলাম সুমন ও কাওসার আহমেদকে আসামি করা হয়। এই মামলায় আজ দুপুরে দুদকের অভিযানে কাওসারকে গ্রেপ্তার করে দুদক ।
এই মামলায় জাহিদুল ইসলাম সুমন পলাতক রয়েছেন বলে জানায় দুদক।
তাৎক্ষনিকভাবে ৪২ লাখ টাকা আটকের বিষয়ে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মাহমুদুল হক (সদ্য বিদায়ী) বলেন, ‘প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের সময় ওই কার্টনভর্তি টাকা অন্য এক ব্যবসায়ীর বলে দাবি করে জাহিদুল ইসলাম সুমন। যদিও ওই ব্যবসায়ীর (এস এম, রানা) সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, এই টাকা তার নয়। সার্ভেয়ার কাওসার ওই ব্যবসায়ীকে অনুরোধ করেছিলেন যেন ওই টাকা নিজের বলে দাবি করেন। সামগ্রিক বিষয়টি সন্দেহজনক মনে হলে আমি দুদকে চিঠি দেই। দুদকও তড়িৎ ব্যবস্থা নিয়েছে। রাত পৌনে নয়টার দিকে ওই সার্ভেয়ারকে সাময়িক বরখাস্তের কথা জানান জেলা প্রশাসক মাহমুদুল হক।’
ওই ঘটনায় অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক রাজস্ব কে তাৎক্ষনিক ওএসডি করা হলেও এখনো ঘটনার মূল তথ্য রয়ে গেহছে অপ্রকাশিত।