বুধবার, ২২ জানুয়ারী ২০২৫, ১২:৪৪ অপরাহ্ন
অগ্নিশিখা প্রতিবেদকঃ প্রথম দ্বিপক্ষীয় সফরে তিন দিনের জন্য চীনের বেইজিংয়ের উদ্দেশে রওনা হয়েছেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন।
সোমবার (২০ জানুয়ারি) বিকেলে পররাষ্ট্র উপদেষ্টার ঢাকা ত্যাগ করার তথ্য জানিয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ইর আমন্ত্রণে তার দেশে যাচ্ছেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা। তিন দিনের সফর শেষে ২৪ জানুয়ারি পররাষ্ট্র উপদেষ্টার দেশে ফেরার কথা রয়েছে।
পররাষ্ট্র উপদেষ্টার এই সফরের মধ্যে দিয়ে ঢাকা-বেইজিং সম্পর্কে নতুন মাত্রা যুক্ত হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে প্রতি বছরই পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা প্রথম দ্বিপক্ষীয় সফরে ভারতে যেতেন। প্রতিবেশীর সঙ্গে রাজনৈতিক সম্পর্কের কারণে প্রথম সফর হিসেবে ভারতকেই বেছে নিতেন তারা। তবে অন্তর্বর্তী সরকারের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা এবার প্রথম দ্বিপক্ষীয় সফরে চীনেই যাচ্ছেন।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ২০ থেকে ২৪ জানুয়ারি চীন সফর করবেন মো. তৌহিদ হোসেন। সফরকালে ২১ জানুয়ারি চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ইর সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে করবেন তিনি। বেইজিং ছাড়াও সাংহাই সফর করবেন উপদেষ্টা।
এ সফরের বিষয়ে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন বলেছেন, “চীন সফরে অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক অনেক বিষয়ে আলোচনা হবে। সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব পাবে বাণিজ্যিক ও অর্থনৈতিক ইস্যুগুলো। আমাদের অনেক প্রকল্পে চীনের বিনিয়োগ আছে। বিনিয়োগ মূলত ঋণ আকারে। তার মধ্যে কিছু প্রকল্প চলমান। এছাড়া অর্থনৈতিক আলোচনাও আছে, যেমন: আমরা ঋণের শর্তাদি নিয়ে কথা বলব। এর মধ্যে আছে সুদহার কমানো বা ঋণ পরিশোধের সময়সীমা বাড়ানো।”
উপদেষ্টা বলেন, “এখনো চীন আমাদের অধিকাংশ পণ্যে শুল্কমুক্ত সুবিধা দিচ্ছে। কিন্তু, এলডিসি থেকে গ্র্যাজুয়েশনের পরে এটা পরিবর্তন হতে পারে। তাই, এটি আমাদের আলোচনার মাধ্যমে আগেই ঠিক করে নিতে হবে। চীনের সঙ্গে সম্পর্কের ৫০ বছর পূর্ণ হচ্ছে। এ উপলক্ষে দুই দেশেই কিছু উৎসব আছে। সেগুলো নিয়েও আমরা কথা বলব।”
সফরসূচি প্রসঙ্গে উপদেষ্টা বলেন, “২১ জানুয়ারি রাজধানী বেইজিংয়ে চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে আনুষ্ঠানিক বৈঠক হবে। তারপর সাংহাইয়ে একটি অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে হবে। এর বাইরে বিদ্যুৎচালিত গাড়ির (ইভি) কারখানা এবং ফ্রুটস প্রিজারভেশনের দুটি শিল্পকারখানা আমাদের দেখানো হবে। তাদের নতুন এসব টেকনোলজি আমাদের দেশে কাজে আসতে পারে।”
আগামীকাল মঙ্গলবার হবে দুই দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠক। আলোচনায় গুরুত্ব পাবে অর্থনীতি, বাণিজ্য ও বিনিয়োগ।
সফরের আগে গতকাল রোববার পররাষ্ট্র উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক করেন চীনের রাষ্ট্রদূত।
চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন বলেছেন, “পররাষ্ট্র উপদেষ্টার চীন সফর দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে আশা করি। এর মধ্যে দিয়ে ঢাকা-বেইজিং বোঝাপড়া আরো বাড়বে। আমরা খোলা মন নিয়ে বাংলাদেশের সব প্রস্তাবের ওপর আলোচনা করতে প্রস্তুত।”
বাংলাদেশকে ১৯৭৫ সালের ৩১ আগস্ট স্বীকৃতি দেয় চীন। সে অনুযায়ী চলতি বছর দুই দেশের কূটনৈতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার ৫০তম বার্ষিকী উদযাপন করা হবে। এ উপলক্ষে উভয় পক্ষই নানা অনুষ্ঠান আয়োজনের কর্মসূচি নিয়েছে। পররাষ্ট্র উপদেষ্টার চীন সফরের সময়ে দুই দেশের কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫০ বছর উদযাপন কর্মসূচির ঘোষণা দেওয়া হবে।
বাংলাদেশ ও চীনের মধ্যে নদী ও পানি ব্যবস্থাপনার বিষয়ে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর হয়েছে। সে সমঝোতা স্মারকের মেয়াদ ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে। পররাষ্ট্র উপদেষ্টার সফরে এই সমঝোতা স্মারক নবায়ন করা হবে। এছাড়া, বাংলাদেশের তিস্তা প্রকল্পে সহায়তা দিতে আগ্রহী চীন। পররাষ্ট্র উপদেষ্টার সফরে বিষয়টি আলোচনায় উঠতে পারে।