বুধবার, ২২ জানুয়ারী ২০২৫, ০৯:৩৮ অপরাহ্ন

জনপ্রতিনিধি না থাকায় সাধারণ মানুষ প্রশাসনের উপর নির্ভরশীল

বিশেষ প্রতিনিধিঃ নারায়ণগঞ্জ শহরে ক্রমশ বিশৃঙ্খলা যখনই বাড়ছে তখন নগরবাসী নবনিযুক্ত জেলা প্রশাসক জাহিদুল ইসলাম এবং জেলা পুলিশ সুপার প্রত্যুষ কুমার মজুমদারের দিকে তাকিয়ে রয়েছেন। বর্তমানে নারায়ণগঞ্জে কোনো জনপ্রতিনিধি না থাকায় সাধারণ মানুষকে প্রশাসনের উপরই নির্ভরশীল হতে হচ্ছে।পুরো দায় দায়িত্ব এখন তাদের উপর রয়েছে।

নগরবাসীর প্রত্যাশা, তারা যদি তাদের দায়িত্ব যথাযথ পালন করে তাহলে শহরে পূর্বের চেয়ে বেশি শৃঙ্খলা ফিরে আসবে। শুধুমাত্র তাদের সদিচ্ছা ও চেষ্টার বেশি প্রয়োজন।আসলে কি তারা দায়িত্ব পালন করবে? প্রশ্ন জনমনে।

তীব্র যানজটের কারণে বর্তমানে শহরের এক স্থান থেকে আরেকস্থানে চলাচল করা প্রায় অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছে। পুরো শহর বসবাসের এক অযোগ্য শহরে পরিণত হয়েছে। এ থেকে পরিত্রাণ চাচ্ছেন নগরবাসী। শহরে একদিকে যানজট ভয়াবহ আকার ধারণ করছে, বিপরীতে বেহাল সড়ক, যততত্র ময়লার ডাস্টবিন, ব্যবহারের অনুপযোগী ফুটপাত, মশার উপদ্রবসহ বিভিন্ন সমস্যা প্রকট ধারণ করছে। এ নিয়ে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে শহরের বাসিন্দাদের। তীব্র যানজটের কারণে নগরবাসীকে এক স্থান থেকে আরেক স্থানে যেতে ৫ মিনিটের জায়গায় ১ ঘন্টা সময় লেগে যাচ্ছে। সেই সঙ্গে অল্প বৃষ্টিতেই তলিয়ে যায় নারায়ণগঞ্জ শহর। যত্রতত্র ময়লা-আবর্জনা ফেলায় পথচারী থেকে শুরু করে যাতায়াত করা যাত্রীদের অনেক কষ্টের সম্মুখীন হতে হচ্ছে। এই দুর্ভোগের মধ্যেই নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের মেয়র থেকে শুরু করে কাউন্সিলরদের অপসারণ করার কারণে সাধারণ মানুষের নাগরিক সকল সুবিধা থেকে অনেকটাই বঞ্চিত হচ্ছেন। এর আগে নারায়ণগঞ্জে একজন মন্ত্রীসহ আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টির এমপিরা ক্ষমতায় ছিলেন দীর্ঘ সাড়ে ১৫ বছর। এসময় তারা উন্নয়নের ফুলঝুরি শুনালেও আদৌ তেমন উন্নয়ন করতে পারেন নি তারা।

জানা যায়, দীর্ঘদিন ধরেই পথচারীদের জন্য নির্মিত ফুটপাত এখনো পর্যন্ত হকারদের দখলে রয়েছে। কিছুদিন পূর্বে আসাদ নামের হকারদের এক নেতা র‌্যাবের হাতে গ্রেফতার হলেও ফুটপাত হকারদের দখলেই রয়েছে। এর আগে ফুটপাত হকারদের দখলে থাকা নিয়ে ওসমান পরিবারকে দায়ী করা হলেও ওসমান পরিবারদের অবর্তমানে ফুটপাত এখনো পর্যন্ত হকারমুক্ত করা সম্ভব হয় নি। তারা বর্তমানে ফুটপাত দখল করে সড়কেও অবস্থান নিয়েছেন। এর ফলে একদিকে পথচারীদের চলাচলে যেমন কষ্টের শিকার হতে হচ্ছে অন্যদিকে যান চলাচলে বিঘ্ন ঘটার কারণে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। নারায়ণগঞ্জের আদমজী-চাষাঢ়া সড়ক, পঞ্চবটি-চাষাঢ়া সড়ক, সাইনবোর্ড-চাষাঢ়া লিংক রোডের চানমারী থেকে চাষাঢ়া পর্যন্ত সড়কসহ বিভিন্ন সড়কের অবস্থা বেশ নাজুক। বেশিরভাগ স্থানেই ইট-খোয়া ওঠে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়ে সড়কটি এখন মরণ ফাঁদে পরিণত হয়েছে। আদমজী-চাষাঢ়া সড়কের ১২ কিলোমিটারের এই সড়কের অন্তত ৮ টি স্থানে বড় বড় খানাখন্দ তৈরি হয়েছে। যেখানে যান চলাচল করা একেবারে দু:সাধ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। মূলত সড়কটির অবস্থা আগে থেকেই নাজুক থাকলেও সওজ এবং নাসিক কর্তৃপক্ষ যথাযথ সংস্কার না করায় বর্তমানে এই সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে। এই সড়কটি সিদ্ধিরগঞ্জবাসীর নারায়ণগঞ্জে যাতায়াতের অন্যতম প্রধান সড়ক। পাশাপাশি এই সড়কে ডিপিডিসির কার্যালয়, সিদ্ধিরগঞ্জ সাইলো, সিদ্ধিরগঞ্জ পাওয়ার স্টেশন, আদমজী ইপিজেড, সিদ্ধিরগঞ্জ থানা, র‌্যাব-১১ এর সদর দপ্তর, সিদ্ধিরগঞ্জ টেলিফোন অফিস, পদ্মা ও মেঘনা ডিপোসহ দুপাশে অসংখ্য সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কার্যালয় রয়েছে। এছাড়া রয়েছে বেশকিছু গার্মেন্টস কারখানা। আর ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোডের সাইনবোর্ড থেকে চানমারী পর্যন্ত সড়কের অবস্থা ভালো থাকলেও চানমারী থেকে চাষাঢ়া পর্যন্ত অংশে সড়কের অবস্থা খুবই খারাপ। একই অবস্থা চাষাঢ়া-পঞ্চবটি সড়কও। দুই সড়কের ছোট যানবাহন থেকে শুরু করে বড় যানবাহনগুলোতে অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে চলাচল করতে হচ্ছে। ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোডের পাশে নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক, জেলা পুলিশ সুপারের কার্যালয়, নারায়ণগঞ্জ গণপূর্ত বিভাগ, জেলা সিভিল সার্জনের কার্যালয়, নারায়ণগঞ্জ জেলা ও দায়রা জজ আদালত, জেলা পরিষদ, এলজিইডি কার্যালয়, পাসপোর্ট অফিস, জেলা কারাগার, জেলা নির্বাচন অফিস ও শিল্প পুলিশ-৪’র পুলিশ লাইন্সসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান রয়েছে।

আর গত চার মাস ধরে শহরের যানজট অসহনীয় পর্যায়ে চলে গেছে। শহরে যততত্র গাড়ি পার্কিং, রুট পারমিটবিহীন যানবাহন চলাচল, অবৈধ স্ট্যান্ড, অবৈধ রিকশার ছড়াছড়ি, যততত্র যাত্রী ওঠানামা করা যানজটের অন্যতম কয়েকটি কারণ। বর্তমানে হকাররা ফুটপাত দখল করার পাশাপাশি সড়কের একটি অংশ দখলে নিয়েছে। এর ফলে যানজটের মাত্রা দিন দিনই বাড়ছেই। এই সমস্যা বাদেও হঠাৎ করে শহরে মশার উপদ্রব বাড়ছে। এর ফলে নাগরিকদের প্রতিনিয়ত ভোগান্তি বাড়ছেই।

গত ১৪ জানুয়ারি নারায়ণগঞ্জে নতুন যুক্ত হয়েই জেলা প্রশাসক পর্যায়ক্রমে সাংবাদিক, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, সুশীল সমাজ, ব্যবসায়ী, শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। প্রত্যেকটি মতবিনিময় সভায় গুরুত্ব পেয়েছে শহরে বর্তমান চলমান বিভিন্ন সমস্যা। প্রত্যেকেই শহরের যানজট, হকার সমস্যা, বেহাল সড়ক নিয়ে কথা বলেছেন। প্রত্যেকটি কথা জেলা প্রশাসক গুরুত্ব দিয়ে শুনেছেন। এখন শুধু কার্যকর করা বাকি। শহরবাসীর ভাষ্য, জেলা প্রশাসক যদি শহরের শৃঙ্খলা ফিরে আনতে পারে এতে করে অনেক সমস্যাই কমে যাবে। পাশাপাশি অন্যান্য সমস্যার সমাধান করাও সহজ হয়ে যাবে। এক্ষেত্রে ডিসি এবং এসপির কঠোর ভূমিকার বিকল্প নাই। তবে কবে থেকে ডিসির অ্যাকশন শুরু হবে তাই দেখার বিষয়। কেননা অন্যান্য সময় প্রশাসন মুখে বিভিন্ন প্রদক্ষেপ নেওয়ার কথা বললেও বাস্তবে তা দেখা যায় নি। এবার তাদের অ্যাকশন দেখার অপেক্ষায় সাধারণ মানুষ।

 

 

 

 

খবরটি শেয়ার করুন

© All rights reserved © 2024 thedailyagnishikha.com
Design & Developed BY Hostitbd.Com