সোমবার, ২৭ জানুয়ারী ২০২৫, ০৫:২৩ পূর্বাহ্ন
সাহাবউদ্দিন,বিশেষ প্রতিনিধিঃ নারায়ণঞ্জগ জেলা প্রশাসকের মূল ফটক, তোলারাম কলেজসহ গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি স্থান ও সরকারি দপ্তরের ফটকে দেয়ালে দেয়ালে ৫ আগস্টের পর পালিয়ে যাওয়া কুখ্যাত অপরাধীদের গডফাদার শামীম ওসমান ও তার পুত্র আরেক অস্ত্রের মজুদদার অপরাধী অয়ন ওসমানের ছবি ব্যবহার করে নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগের পোস্টারিংয়ের প্রতিবাদে মিছিল ও সমাবেশ করেছে বিভিন্ন ছাত্র সংগঠন ও সাধারণ শিক্ষার্থীরা।
বৃহস্পতিবার (২৩ জানুয়ারি) বিকেলে ছাত্র সংগঠনের নারায়ণগঞ্জ তোলারাম কলেজ থেকে মিছিলটি বেড়িয়ে শহর প্রদক্ষিণ করে নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাবের সামানে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করে বিভিন্ন ছাত্র সংগঠন ও সাধারণ শিক্ষার্থীরা।
ছাত্র ফেডারেশনের নারায়ণগঞ্জ জেলা কমিটির সভাপতি ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সংগঠক ফারহানা মানিক মুনার নেতৃত্বে শিক্ষার্থীরা জানান, ‘কারা এই পোস্টারিং করেছে’ তাদের চিহ্নিত করতে হবে। চিহ্নিত করে জনসম্মুখে আনা না হলে জেলা প্রশাসক ও জেলা পুলিশ সুপারকে ‘জবাবদিহি করতে হবে।’
এ ছাড়াও আজ বৃহস্পতিবার সকালে নারায়ণগঞ্জ প্রেস ক্লাবের সামনে সামনে এক প্রতিবাদ সমাবেশে এই কথা বলেন মুনা।
এই ছাত্রনেতা আরও বলেন, ‘শামীম ওসমান, তার ছেলে অয়ন ওসমানের তান্ডব শুধু জুলাই আগস্টে নয়, গত ১৫ বছর দেখেছি। দেখেছি তারা কীভাবে এই তোলারাম কলেজকে টর্চার সেলে পরিণত করেছে। নারায়ণগঞ্জকে কীভাবে সাত খুন, ত্বকী হত্যার, গডফাদারের শহরে পরিণত করেছে। এই সন্ত্রাস, গডফাদারদের নারায়ণগঞ্জে ঠাঁই হবে না। শুধু সদর নয় নারায়ণগঞ্জ জেলার কোনো প্রান্তেই আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগের কোনো দোসর বা হত্যাকারীর আশ্রয় হবে না। যারা আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ গণহত্যাকারীদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দিতে চাচ্ছেন, নানানভাবে শেল্টার দিচ্ছেন তাদের হুঁশিয়ার করে বলছি, মনে রাখবেন শেল্টারদাতা হিসেবে আপনাকেও জনগণের সম্মুখে দাঁড় করানো হবে, জাবাব দিতে হবে। আপনাদেরও গণহত্যাকারীদের সাথে শামিল করে বিচারের আওতায় আনা হবে।’
ফারহানা মানিক মুনা বলেন, ‘আমরা দীর্ঘ ১৫ বছরের সংগ্রামের পর ৫ আগস্টের মধ্য দিয়ে সমগ্র বাংলাদেশে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ জেলা নারায়ণগঞ্জকে একটি গডফাদারমুক্ত হিসেবে রূপান্তরিত করেছি। এই গডফাদারমুক্ত নারায়ণগঞ্জ গড়ার লড়াইয়ে নারায়ণগঞ্জের ছাত্রজনতা কীভাবে বুক চিতিয়ে লড়াই করেছে, রক্ত দিয়েছে তা আমাদের সকলের সামনে দৃষ্টান্ত। গত ১৮, ১৯ জুলাই যারা অস্ত্র হাতে মহড়া দিয়েছে যাদের গুলিতে শিশু রিয়া গোপ হত্যা হয়েছে, ছাত্র জনতা শহীদ হয়েছে, তাদের (হামলাকারী) পোস্টার নারায়ণগঞ্জে কীভাবে লাগে! এর জবাব আমরা চাই।’
ফারহানা মানিক মুনা বৈষম্য বিরোধী ছাত্র জনতার অভ্যুত্থানের ৬ মাস পরেও হত্যার বিচার শুরু না হওয়ায় নিন্দা জানিয়ে আরো বলেন, ‘যতদিন পর্যন্ত হত্যাকারীদের বিচারের আওতায় আনা না হবে, ততদিন শেল্টারের কারখানা চলতে থাকবে। এটা আমরা চাই না। যে ভাই-বোনদের রক্তের উপর দাঁড়িয়ে নতুন বাংলাদেশ যাত্রা এই রক্তের সাথে বেঈমানি করা চলবে না। অনতিবিলম্বে হত্যাকারীদের বিচারের আওতায় আনতে হবে। বাংলাদেশে গণগত্যা বিচারের দৃষ্টান্ত তৈরি করতে হবে।’
মুনা প্রশ্ন রাখেন, ‘রাতে যেসব জায়গায় তোলারাম কলেজ, মহিলা কলেজ, জেলা পরিষদে পোস্টারিং করা হয়েছে সেগুলো নীরব জায়গা না। সবগুলোই লোকসমাগমের জায়গা। এসব জায়গায় কীভাবে আওয়ামী লীগের, শামীম ওসমানের পোস্টার লাগে ? এর জবাব আমরা জেলা প্রশাসক এবং এসপির কাছে জানতে চাই। গত ১৫ বছর জেলা পরিষদে অন্য কেউ নিজেদের ন্যায্য দাবির পোস্টার লাগাতে পারেনি। তাহলে হত্যাকারীদের পোস্টার জেলা পরিষদের গেটে কীভাবে লাগে ?’
জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের নারায়ণগঞ্জ মহানগরের সাবেক জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সম্পাদক আজিজুল ইসলাম রাজীব, ইসলামী ছাত্র শিবিরের তোলারাম কলেজ শাখার সভাপতি সাইফুল ইসলাম, ইসলামী ছাত্র আন্দোলন মহানগর শাখার সাধারণ সম্পাদক আবুল হাসিম, ছাত্র মজলিশ মহানগর সভাপতি মো. শাহনেওয়াজ মাহমুদ, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সংগঠক জাহিদ হাসান, মাহফুজ খান, ছাত্রনেতা আতিকুজ্জামান অনু, জাভেদ হোসেনসহ অন্যান্যদে;র উপস্থিতিতে ফারহানা মানিক মুনা আল্টিমেটাম দিয়ে বলেন, ‘২৪ ঘন্টার মধ্যে কারা পোস্টার লাগিয়েছে তাদের জনসম্মুখে আনতে হবে। অন্যথায় জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার আপনাদের ছাত্র জনতার মুখোমুখি দাঁড়াতে হবে। কেন আপনারা তাদের বিচারের আওতায় আনতে পারলেন না ? এর জবাব দিতে হবে।’।