বুধবার, ০৫ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ০৭:০১ অপরাহ্ন

সর্বশেষ :
সরকারি কর্মচারীদের হেনস্তা ঠেকাতে ‘প্রশাসনিক ন্যায়পাল’ নিয়োগের সুপারিশ সেনাপ্রধানের সঙ্গে সেন্ট্রাল আফ্রিকার সেনা কর্মকর্তার সাক্ষাৎ দিল্লিতে বিধানসভার ভোট আজ, কঠিন লড়াইয়ের আভাস নারায়নগঞ্জের শীতলক্ষ্যা নদী থেকে অজ্ঞাত এক যুবকের মরদেহ উদ্ধার অধ্যাপক মামুন মাহমুদ কে নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক নির্বাচিত করায় আনন্দ মিছিল সাংবাদিক জামালউদ্দিনের মায়ের ইন্তেকাল লক্ষীপুরের দত্তপাড়ায় সাংবাদিকদের উপর হামলার ঘটনায় জড়িত ৩ আসামী গ্রেফতার যেভাবে পালালেন শামীম ওসমান আনিসুল হকের ৩ দিনের রিমান্ড শ্রম সংস্কার বাস্তবায়নে অন্তর্বর্তী সরকার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ: ড. ইউনূস

যেভাবে পালালেন শামীম ওসমান

সাহাব উদ্দীন,বিশেষ প্রতিনিধি নারায়ণগঞ্জঃ শামীম ওসমান ! যিনি দীর্ঘন রাজনীতি নামে সকল ধরণের অপরাধ করে আলোচিত সমালোচিত। যুগের পর যুগ সময় ধরে নারায়ণগঞ্জে রাজত্ব করে গেছেন দন্তবিহীন এক সিংহপুরুষ। শুধু বাংলাদেশের মানুষই নয়, সারা বিশ্বের মানুষের কাছেই তিনি পরিচিতি লাভ করেছিলেন তার সকল ধরণের বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের কারণে।

এমন টা ই মনে করেন নারায়ণগঞ্জের সর্বসাধারণ।বেশির ভাগ সময় তিনি পলাতক সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও তার পরিবারের সদস্যদের নাম ভাঙ্গিয়ে দেশে অপরাধের সাম্রাজ্য গড়ে তুলেছিলেন। এই দন্তবিহীন সিংহ আর কেউ নন, নাম তার শামীম ওসমান।

বয়সের ভারে ক্লান্ত হয়ে পড়লেও অপকর্মে তিনি ছিলেন অপ্রতিদ্বন্দ্বিহীন। সাবেক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনাও তাকে সমীহ করে চলতেন, কখন তাকেই না আবার কটূচালে ফেলে কী করে ফেলেন।

শামীম ওসমানকে সারাদেশের মানুষ যেভাবেই চিনে থাকুক না কেন,আসলে তিনি স্রেফ স্ট্যান্টবাজি করে সরকারি সম্পত্তি আত্মসাত, চাঁদাবাজি, জমি দখল, টেন্ডারবাজির নিয়ন্ত্রণ, মেঘনা গ্রুপ, বসুন্ধরা গ্রুপ নিয়ন্ত্রণ, জলমহাল নিয়ন্ত্রণসহ নানা অপকর্ম করে ৭ থেকে ৮ হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। শামীম ওসমান মুখে যতোই হুংকার দিতেন না কেন, তিনি আসলে নারায়ণগঞ্জ তথা আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে ছিলেন অশ্বডিম্ব।

একদল দুর্নীতিবাজের সাথে ছিলো তার গভীর সখ্যতা, আর তাদেরকে সাথে নিয়ে গড়ে তুলেছিলেন অবৈধ সম্পদ আর টাকার পাহাড়। নারায়ণগঞ্জে তার স্ত্রী লিপি ওসমান, ছেলে অয়ন ওসমান, শ্যালক তানভীর টিটু, খালাতো শ্যালক নীপু,মামা শ্বশুর জালালসহ পরিবারের অধিকাংশ সদস্যই নানা অপরাধের সাথে জড়িত ছিলেন। আর এ কারণে নারায়ণগঞ্জের মানুষ এই পরিবারের সদস্যদের ঘৃণা করতো কিন্তু ভয়ে খুব কম মানুষই তাদের বিরুদ্ধে কথা বলতো।

গত বছরের জুলাই-আগষ্টে ছাত্র জনতার আন্দোলনকালে শামীম ওসমান,তার ছেলে অয়ন ওসমান, শ্যালক টিটু, নিপু, নিজামসহ বাহিনীর সদস্যরা প্রকাশ্যে গুলি চালিয়ে আন্দোলন দমানোর চেষ্টা চালিয়ে ব্যর্থ হয়। ৪ আগষ্ট রাত পর্যন্ত শামীম ওসমান নারায়ণগঞ্জে তার ক্যাডার বাহিনীকে নিয়ে অবস্থান করেছিলেন।

বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা গেছে, ৪ আগষ্ট শামীম ওসমানের স্ত্রী লিপি ওসমান, তার মেয়ে লাবিবা জোহা অঙ্গনা, অয়নের স্ত্রী ইরফানা আহমদ রাশমী, অয়নের শিশু পুত্র আরজিয়ান ওসমান গুলশানে অবস্থিত দিপু ভূঁইয়ার মালিকানাধীন বাড়ি গাউসিয়া বিল্ডিংয়ে। দিপু ভূঁইয়ার কাছ থেকে বছর খানেক আগে ঐ এ্যাপার্টমেন্ট ভবনের ৬ হাজার স্কোয়ার ফিটের একটি ফ্ল্যাট কিনে নেন শামীম ওসমান। এরপর থেকে ওই ফ্ল্যাটে স্বপরিবারে বসবাস করে আসছিলেন শামীম ওসমান। রূপগঞ্জের বিএনপি নেতা দীপু ভূঁইয়ার সাথে শামীম ওসমান ও তার পরিবারের সখ্যতা দীর্ঘদিনের।

সূত্র জানায়, ৫ আগষ্ট শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে পালিয়ে গেলে শামীম ওসমান ও তার ছেলে অয়ন ওসমান আত্মগোপনে চলে যান। গুলশানের বাড়িতে আটকা পরেন লিপি ওসমানসহ পরিবারের অন্য সদস্যরা। ঐ দিন সকাল সাড়ে ১০টায় পারিবারিক বন্ধু বিএনপি নেতা দীপু ভূঁইয়া সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন। দীপু ভূঁইয়া নিজেই কালো গ্লাস ঘেরা গাড়িতে করে লিপি ওসমান, তার মেয়ে লাবিবা জোহা অঙ্গনা, অয়নের স্ত্রী ইরফানা আহমদ রাশমী ও অয়নের শিশু সন্তানকে নিয়ে রওনা দেন সিলেটের উদ্দেশ্যে। রাতেই তাদের নিয়ে যাওয়া হয় ডাউকি সীমান্তবর্তী নদীর চরে। লিপি ওসমানসহ সবাই এক কাপড়ে ঘর ছাড়েন। ৫ আগষ্ট রাতটি ছিলো লিপি ওসমান ও তার পরিবারের জন্য একটি বিভীষিকার রাত।

সূত্র জানায়, চরে অবস্থান নিলেও পুরো রাতটা লিপি ওসমান ও তার পরিবারের সদস্যরা নদীর পানিতে কখনো ডুব দিয়ে কখনো ভেসে থেকে কাটিয়ে দিয়েছেন। সীমান্ত এলাকায় সার্স লাইটের আলো জ্বলে উঠলেই লিপি ওসমান ও তার পরিবারের সদস্যরা নদীর পানিতে ডুব দিয়ে শুধু নাক উঁচিয়ে শ্বাস প্রশ্বাস নিতেন। সীমান্ত এলাকার টহল একটু দূরে সরে গেলে তারা আবার ডাঙ্গার কাছাকাছি চলে আসতেন।

এরমধ্যে শামীম ওসমানের অনুগত বন্ধু কলকাতায় অবস্থানরত নারায়ণগঞ্জের ছেলে সুইজারল্যান্ডের পাসপোর্টধারী অনুপের সাথে বাংলাদেশ থেকে যোগাযোগ করা হয়। অনুপ কলকাতা থেকে একটি গাড়ি বহর নিয়ে ডাউকি সীমান্তে লিপি ওসমান ও তার সঙ্গীদের নেয়ার জন্য অপেক্ষা করতে থাকেন। দিনের আলোয় সীমান্ত এলাকা ম্যানেজ করে ওপাড়ে চলে যান লিপি ওসমানসহ ৪ জন। ডাউকিতে ইমিগ্রেশন শেষে অনুপের সাথে তারা সোজা চলে যান কলকাতায়।

এদিকে দেশে আটকা পড়েন শামীম ওসমান ও তার ছেলে অয়ন ওসমান। কুমিল্লাতে গিয়ে তারা আত্মগোপন করেন। মামা শ্বশুর সিদ্ধিরগঞ্জের জালাল এই দুইজনকে কিছু দিনের জন্য নিরাপদ হেফাজতে রাখেন।

সূত্র জানিয়েছে, আগষ্টের শেষ সপ্তাহ পর্যন্ত শামীম ওসমান ও অয়ন ওসমান বাংলাদেশেই আত্মগোপনে ছিলেন। শামীম ওসমানের ঘনিষ্ট বন্ধু বিএনপি নেতা ইকবাল এসময় তাদের দেখভাল করেন। আন্ডারওয়াল্ডে ইকবালের রয়েছে একচ্ছত্র আধিপত্য।

সূত্র জানিয়েছে পরবর্তীতে ইকবালই সুযোগ বুঝে শামীম ওসমান ও অয়ন ওসমানকে সীমান্ত পার করে দিতে সহায়তা করেন। শামীম ও অয়ন প্রথমে কলকাতা ও পরবর্তীতে দিল্লীতে অবস্থান করেন। এসময় নিজামউদ্দিন আওলীয়ার মাজার ও আজমির শরীফ জেয়ারত করতে দেখা যায় শামীম ওসমানকে। পরবর্তীতে দিল্লী থেকে স্বপরিবারে আরব আমিরাতের আজমানিয়াতে চলে যান শামীম ওসমান। আজমানিয়াতে শামীম ওসমান ও তার পরিবারের সাম্রাজ্য রয়েছে। যা তিনি অনেক আগে ওই এলাকার শেখের মাধ্যমে গড়ে তুলেছিলেন। কিছুদিন আগে অয়ন ওসমানকে দেখা গেছে স্বপরিবারে তুরস্ক ভ্রমণ করতে। তুরস্কেও শামীম ওসমানের অঢেল সম্পদ রয়েছে। এছাড়া নিউইয়র্কে অবস্থানরত লিপি ওসমানের বড় ভাই ডাক্তার শামীমের মাধ্যমে একশ’ মিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগ করেছেন। শামীম ওসমানের শ্যালক তানভির টিটু দেশ ছেড়ে পালিয়ে বর্তমানে আমেরিকায় অবস্থান করছেন। আমেরিকাতেও টিটুর আলাদা সাম্রাজ্য রয়েছে।

শামীম ওসমানের ঘনিষ্ট সূত্র গুলো বলছেন,বর্তমানে দেশে শামীম ওসমানের ফেলে যাওয়া ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও সম্পদের দেখাশোনা করছেন পুরনো বন্ধু বিএনপি নেতা ইকবাল। শামীম ওসমান চাচ্ছেন, ধীরে ধীরে তার এবং পরিবারের ব্যবহৃত গাড়ী, ফ্ল্যাট, বাড়ী, কার্গো জাহাজাসহ বাংলাদেশের সম্পদগুলো বিক্রি করে দিবেন। এজন্য তিনি ঘনিষ্টজনদের সাথে দুবাই থেকে নিয়মিত যোগাযোগও করে চলেছেন।

খবরটি শেয়ার করুন

© All rights reserved © 2024 thedailyagnishikha.com
Design & Developed BY Hostitbd.Com