বৃহস্পতিবার, ২০ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ০৭:৪০ অপরাহ্ন
অগ্নিশিখা প্রতিবেদক: ‘নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণে যাকাত’ প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে রাজধানীতে আগামী শনিবার (২২ ফেব্রুয়ারি) থেকে শুরু হচ্ছে দুই দিনব্যাপী যাকাত মেলা।
আজ বৃহস্পতিবার (২০ ফেব্রুয়ারি) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি সাগর রুনি মিলনায়তনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে ‘যাকাত ফেয়ার ২০২৫’ আয়োজনের ঘোষণা দেন মেলা আয়োজন কমিটির আহ্বায়ক ড. মোহাম্মদ আবদুল মজিদ।
আয়োজকরা জানায়, যাকাত একটি সামাজিক আন্দোলন, বৈষম্য দূর করে একটি মর্যাদাপূর্ণ সমাজ গঠন করতে সাহায্য করে। এই আয়োজনে, আমরা সবাইকে আহ্বান জানাচ্ছি। সমৃদ্ধ আগামীর জন্য সচেতনভাবে যাকাত দিন দারিদ্র্য হ্রাস, শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও কর্মসংস্থানে ভূমিকা রাখুন।
শনিবার সকাল ১১টায় রাজধানীর গুলশান তেজগাঁও লিংক রোডে এ অবস্থিত আলোকি কনভেনশন সেন্টারে অনুষ্ঠিত এ ফেয়ারের উদ্বোধন করবেন বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশির উদ্দিন।
সেন্টার ফর যাকাত ম্যানেজমেন্টের (সিজেডএম) উদ্যোগে ২২ ও ২৩ ফেব্রুয়ারি (শনি ও রোববার) অনুষ্ঠিত হবে ত্রয়োদশ যাকাত ফেয়ার। এবারের যাকাত ফেয়ারে স্পন্সর হিসেবে রয়েছে রহিমআফরোজ, খাদিম সিরামিকস, কোহিনুর কেমিক্যাল, রহিম চিল, সাউথ ব্রিজ, হজ ফাইনান্স কোম্পানি, আইডিএলসি ইসলামিক, এসএমসিসহ দেশের স্বনামধন্য বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান। ফেয়ারে বিভিন্ন আর্থিক ও যাকাত প্রতিষ্ঠানের স্টলসহ যাকাত কনসালটেশন ডেস্ক ও বিভিন্ন ইসলামিক বইয়ের স্টল থাকবে।
সংবাদ সম্মেলনে ড. মোহাম্মদ আবদুল মজিদ বলেন, আমরা মনে করি, জুলাই বিপ্লবের পর দেশের জনগণের মধ্যে একটি বৈষম্যহীন, দারিদ্রমুক্ত ও ন্যায়ভিত্তিক সমাজ বিনির্মাণের যে স্বপ্ন তৈরি হয়েছে তা রূপায়নে যাকাত একটি গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে পারে। সঠিকভাবে যাকাত দিলে শুধু অভাবীদের সহায়তা করা নয়, বরং তাদের আত্মনির্ভরশীল করে তোলা, যাতে তারা ভবিষ্যতে দাতা হতে পারে। বাংলাদেশে বর্তমানে এক লক্ষ কোটি টাকার যাকাত হয়। ইউএনডিপির সাম্প্রতিক প্রতিবেদন অনুযায়ী দেশে প্রায় ৪ কোটি ১৭ লাখ মানুষ চরম দারিদ্র্যের মধ্যে বাস করছেন। জাতিসংঘের প্রতিবেদন অনুযায়ী দেশে ১ কোটি ৮৭ লাখ মানুষ তীব্র খাদ্য নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছে। দেশে প্রায় ১৩ শতাংশ মানুষ ক্ষুধা নিয়ে ঘুমাতে যান। কিন্তু কল্পনা করুন, যদি এক লক্ষ কোটি টাকা যাকাত সঠিকভাবে ব্যবহৃত হতো তাহলে বাংলাদেশে কেউ অভুক্ত থাকতো না। ১ লক্ষ কোটি টাকা যদি ১ কোটি ৮৭ লাখ তীব্র খাদ্য নিরাপত্তাহীন মানুষদের মাঝে বণ্টন করা হয় তাহলে জনপ্রতি ৫৩ হাজার ৪৭৫ টাকা করে পড়ে যা একটি মানুষের সারা বছরব্যাপী খাদ্য যোগানের জন্য যথেষ্ট। বাংলাদেশে সিজেডএমের মতো প্রাতিষ্ঠানিক যাকাত ব্যবস্থাপনায় ১০০০ কোটি টাকার যাকাত বিতরণ করলে ৫৩ লাখ মানুষের মৌলিক চাহিদা খাদ্য, বস্ত্র, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা, চিকিৎসা নিশ্চিত করা সম্ভব।
তিনি আরও বলেন, যাকাত হচ্ছে একটি আন্দোলন, যা দিয়ে দেশ থেকে পুরোপুরি দারিদ্র দূরীকরণ সম্ভব, আর এটি করতে গেলে দরকার সিজেডএমের মতো আরও অনেক প্রতিষ্ঠান। প্রাতিষ্ঠানিক যাকাত ব্যবস্থাপনার এই আন্দোলন ছড়িয়ে দিয়ে নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণ এর স্বপ্ন নিয়ে কাজ করছে সিজেডএম।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, এবারের যাকাত ফেয়ার চলাকালীন মোট সাতটি অধিবেশন অনুষ্ঠিত হবে। ‘রোল অর ইসলামিক সোশ্যাল ফাইন্যান্স ইন ইকোনমিক ইম্পাওয়ারমেন্ট অ্যান্ড হিউম্যান ডেভলপমেন্ট’ শীর্ষক উদ্বোধনী সেমিনার অনুষ্ঠিত হবে ২২ ফেব্রুয়ারি সকাল ১১টায়। এতে গেস্ট অব অনার হিসেবে উপস্থিত থাকবেন ওয়ার্ল্ড যাকাত এন্ড ওয়াকফ ফোরামের সেক্রেটারি জেনারেল দাতুক ড. মোহাম্মদ গাজালি নুর, সাবেক খাদ্যমন্ত্রী লে. জে. (অব:) এম নুরুদ্দীন খান।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন— সেন্টার ফর যাকাত ম্যানেজমেন্টের নির্বাহী পরিষদের কনভেনার এবং রহিমআফরোজ গ্রুপের গ্রুপ পরিচালক মুনওয়ার মিসবাহ মঈন, প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ড. মোহাম্মদ আইয়ুব মিয়া ও সিজেডএমের হেড অব কর্পোরেট অ্যাফেয়ার্স কর্নেল অব. মুহাম্মদ জাকারিয়া হোসেন।
উদ্বোধনী সেমিনারে সভাপতিত্ব করবেন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ড. হোসেন জিল্লুর রহমান। মেলায় নারীদের জন্য ‘নারী জীবনে যাকাত, সাদাকাহ ও ওয়াকফ অনুশীলনের গুরুত্ব ও তাৎপর্য’ শীর্ষক সেমিনার ও প্রশ্নোত্তর বিশেষ অনুষ্ঠান এবং একইসময় অন্য হলে অনুষ্ঠিত হবে ‘যাকাত ক্যালকুলেশন ওয়ার্কশপ’।