বুধবার, ১২ মার্চ ২০২৫, ০৯:৫৯ পূর্বাহ্ন
অগ্নিশিখা প্রতিবেদক: অন্তর্বর্তী সরকারকে ‘স্থানীয় নির্বাচন’ অনুষ্ঠানের পরিকল্পনা থেকে সরে আসার আহ্বান জানিয়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, অবিলম্বে আগামী দিনের সুনির্দিষ্ট ‘কর্ম পরিকল্পনার রোডম্যাপ’ ঘোষণা করুন।
আজ বৃহস্পতিবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে জাতীয় সংসদ ভবনের এলডি হল সংলগ্ন মাঠে বিএনপির বর্ধিত সভায় লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে তিনি এসব কথা বলেন।
তারেক রহমান বলেন, আমি অন্তর্বর্তী সরকারকে আহ্বান জানাই, জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচন করার সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসুন।
তারেক রহমান বলেন, বাংলাদেশের গণতন্ত্রকামী জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষা প্রতীক বিএনপির বর্ধিত সভা দীর্ঘ ৭ বছর পর অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এর আগে বিএনপির সর্বশেষ বর্ধিত সভা অনুষ্ঠিত হয়েছিল ২০১৮ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি। সেই অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন মাদার অব ডেমোক্রেসি বেগম খালেদা জিয়া। ফ্যাসিবাদী শাসনকালে এরপর আর বিএনপির বর্ধিত সভা কিংবা কাউন্সিল অনুষ্ঠান সম্ভব হয়নি।
চিকিৎসাধীন থাকায় খালেদা জিয়া আজকের এই গুরুত্বপূর্ণ সভায় উপস্থিত থাকতে পারেননি বলে উল্লেখ করে তারেক রহমান বলেন, তবে তিনি এই সভার সাফল্য কামনা করেছেন। তিনি আপনাদের কাছে দোয়া চেয়েছেন। দেশনেত্রীর শারীরিক সুস্থতার জন্য আমরা আল্লাহর দরবারে দোয়া কামনা করছি। মাদার অব ডেমোক্রেসি বেগম খালেদা জিয়ার সম্মোহনী ব্যক্তিত্ব আর সুদক্ষ নেতৃত্ব বিএনপিকে পৌঁছে দিয়েছিলো সারাদেশের প্রতিটি গ্রামে প্রতিটি ঘরে।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, আজকের এই বর্ধিত সভার শুরুতেই আমি বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা স্বাধীনতার ঘোষক শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানকে স্মরণ করতে চাই। তিনি একদলীয় অভিশপ্ত বাকশালের অন্ধকারাচ্ছন্ন বাংলাদেশে গণতন্ত্রের আলো জ্বালিয়েছিলেন। জনগণের ভালোবাসায় ধন্য বিএনপির হাতে গণতন্ত্রের পতাকা তুলে দিয়েছিলেন।
তারেক রহমান বলেন, হাজারও শহীদের আত্মত্যাগের মধ্যে দিয়ে স্বাধীনতাপ্রিয় বীর জনতার রক্তক্ষয়ী গণঅভুত্থানে ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে পালানোর পর দেশে গণতন্ত্রকামী মানুষের সামনে বাংলাদেশ পুনর্গঠনের এক অপার সম্ভাবনার দ্বার উন্মুক্ত হয়েছে। এই সুযোগ এবং সম্ভাবনা নস্যাৎ করার জন্য এরই মধ্যে নানা রকম ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে। সুকৌশলে রক্ত পিচ্ছিল রাজপথে গড়ে ওঠা ‘জাতীয় ঐক্য’ এবং জাতীয় নির্বাচনের পরিবেশ বিনষ্টের অপচেষ্টা চলছে।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, টাকা পাচার আর লুটপাট চালিয়ে দেশের অর্থনীতি ভঙ্গুর করে দিয়েছিল। অকার্যকর করে দেয়া হয়েছিল দেশের সকল সাংবিধানিক এবং বিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠান। জনগণের ভোটের অধিকার হরণ করে জনগণকে রাজনৈতিকভাবে ক্ষমতাহীন করে দিয়ে দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্বকে বিপন্ন করে তুলেছিল।
তিনি বলেন, এমন পরিস্থিতিতে রাষ্ট্র সরকার এবং রাজনীতির গুণগত পরিবর্তনের লক্ষ্যে মাদার অফ ডেমোক্রেসি বেগম খালেদা জিয়া ২০১৭ সালে ভিশন ২০৩০ দিয়েছিলেন। এরই ধারাবাহিকতায় ২০২২ সালে বিএনপি ২৭ দফা কর্মসূচি ঘোষণা করে। পরবর্তীতে গণতন্ত্রের পক্ষের রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে মতবিনিময়ের পর ঘোষণা করা হয় ৩১ দফা কর্মসূচি। এই ৩১ দফা নিয়ে বর্তমানে বিএনপির উদ্যোগে সারাদেশে জনগণের সঙ্গে সংলাপ চলছে।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, রাষ্ট্র এবং সমাজে জনগণের রাজনৈতিক ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করার পূর্ব শর্ত হলো প্রতিটি নাগরিকের ভোট প্রয়োগের অধিকার বাস্তবায়ন। এবং এ লক্ষ্যেই একটি রাজনৈতিক দল হিসেবে বিএনপি বারবার জনগণের ভোটে জনগণের কাছে দায়বদ্ধ সরকার প্রতিষ্ঠা করার লক্ষ্যেই জাতীয় নির্বাচনের দাবি জানায়।
তিনি বলেন, একজন রাজনৈতিক কর্মী আমি বিশ্বাস করি আজ এবং আগামী দিনের রাজনীতিতে বিএনপির এই ৩১ দফা হচ্ছে, একটি বৈষম্যহীন গণতান্ত্রিক মানবিক বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার সনদ। তবে এই ৩১ দফাই শেষ কথা নয় সময়ের প্রয়োজনে রাষ্ট্র সরকার- রাজনীতি ও রাজনৈতিক দলের সংস্কারের জন্য এই ৩১ দফায়ও সংযোজন-বিযোজনের সুযোগ রয়েছে। এমনকি বিএনপির ৩১ দফার সঙ্গে বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সংস্কার প্রস্তাবনার খুব বেশি ইস্যুতে মৌলিক বিরোধ নেই।
তারেক রহমান বলেন, বিভিন্ন সময়ে ‘জাতীয় নির্বাচন’ নিয়ে প্রধান উপদেষ্টার বক্তব্য জনমনে ইতিবাচক ধারণা সৃষ্টি করলেও ‘জাতীয় নির্বাচন’ নিয়ে কোনো কোনো উপদেষ্টার বিভ্রান্তিমূলক বক্তব্য মন্তব্য স্বাধীনতাপ্রিয় গণতন্ত্রকামী জনগণের জন্য হতাশার কারণ হয়ে উঠছে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতি বিএনপিসহ গণতন্ত্রের পক্ষের সকল রাজনৈতিক দলের নিঃশর্ত সমর্থন থাকলেও সরকার এখনও তাদের কর্মপরিকল্পনায় অগ্রাধিকার নির্ধারণ করতে পারছেনা।
তিনি আরও বলেন, সারাদেশে খুন হত্যা ধর্ষণ চুরি ছিনতাই রাহাজানি বেড়েই চলেছে। বাজার সিন্ডিকেটের কবলে পড়ে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণহীন। বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এখনও দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির ওপর সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে পারেনি। সরকার যেখানে দেশের বাজার পরিস্থিতি কিংবা আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কাঙ্ক্ষিত সফলতা অর্জন করতে পারছে না সেখানে জাতীয় নির্বাচনের আগে ‘স্থানীয় নির্বাচন’ অনুষ্ঠানের নামে কেন দেশের পরিস্থিতি আরো ঘোলাটে করতে চাইছে এটি জনগণের কাছে বোধগম্য নয়।
জনগণ মনে করে স্থানীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে সেটি হবে সারাদেশে পলাতক স্বৈরাচারের দোসরদের পুনর্বাসনের একটি প্রক্রিয়া যা সরাসরি গণঅভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষা বিরোধী বলে উল্লেখ করে তারেক রহমান বলেন, গণহত্যাকারী টাকা পাচারকারী দুর্নীতিবাজ মাফিয়া চক্রকে পুনর্বাসন প্রক্রিয়ার এই ফাঁদে বিএনপি পা দেবে না।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, বিএনপি জনগণের কাছে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ, আগামী জাতীয় নির্বাচনে বিএনপি জন রায়ে রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব পেলে গণহত্যাকারী-মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচারের মুখোমুখি করবে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতি আহ্বান, সারাদেশে গণ হত্যাকারীদের দোসর মাফিয়া চক্রকে পুনর্বাসনের ‘স্থানীয় নির্বাচন’ অনুষ্ঠানের পরিকল্পনা থেকে সরে আসুন। অবিলম্বে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের আগামী দিনের সুনির্দিষ্ট ‘কর্ম পরিকল্পনার রোডম্যাপ’ ঘোষণা করুন।
মাফিয়া প্রধান হাসিনা দেশ ছেড়ে পালানোর পর এ পর্যন্ত ১৬/১৭টি নতুন রাজনৈতিক দলের আত্মপ্রকাশ ঘটেছে বলে উল্লেখ করে তারেক রহমান আরও বলেন, বহুদলীয় গণতন্ত্রে বিশ্বাসী বিএনপি সকল নতুন রাজনৈতিক দল ও সংগঠনকে স্বাগত জানায়। তবে নির্বাচনের মাধ্যমে গ্রহণ কিংবা বর্জনের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানাবে জনগণ। সুতরাং, প্রতিটি দলের অংশগ্রহণে একটি অবাধ ও সুষ্ঠু ‘জাতীয় নির্বাচন’ অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে সবার আগে নির্বাচন কমিশনকে প্রস্তুত রাখতে হবে।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, দেশে একটি অবাধ এবং সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য নিরপেক্ষতাই হচ্ছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সবচেয়ে বড় পুঁজি। কিন্তু সরকারের নিরপেক্ষতা নিয়ে ইতোমধ্যেই জনমনে সন্দেহ সংশয়ের সৃষ্টি হয়েছে। নিজেদের নিরপেক্ষতা বজায় রাখতে আমি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতি আরো সতর্কতা অবলম্বনের আহ্বান জানাই।