বৃহস্পতিবার, ১৩ মার্চ ২০২৫, ০৫:৪১ অপরাহ্ন

ভাঙ্গাভিটা এবছর বাঙ্গির বাম্পার ফলন

আমিনুর রহমান,দোহার নবাবগঞ্জ প্রতিনিধি: ঢাকার নবাবগঞ্জের কৈলাইল ইউনিয়নের প্রত্যন্ত গ্রাম ভাঙ্গাভিটায় বাঙ্গির চাষ হচ্ছে প্রায় ৫০ বছর ধরে। হিন্দু অধ্যুষিত ভাঙ্গাভিটার পুর্বপুরুষের এ শখের কাজটি যেন এখন অনেকের কাছে ব্যবসার সুযোগ সৃষ্টি করেছে। একই এলাকায় জুড়ে দেশের কোথাও এমন মৌসুমী ফল চাষ হয় বলে জানা নেই কারো। তবে ভাঙ্গাভিটা এলাকায় এ বাঙ্গি চাষে ঢাকার আশেপাশে বেশ সাড়া ফেলে দিয়েছে।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ভোরের সূর্য উঁকি মারছে। এমন সময়ের আগেই কৃষক ক্ষেতে গিয়ে বাঙ্গি তুলতে ব্যস্ত সময় পার করছেন। পাইকারী ক্রেতারা সরাসরি কৃষকের কাছ থেকে এ ফলটি কিনে বাজারে বিক্রি করেন। কাঁক ডাকা ভোরে তারাও হাজির এ গ্রামে। কেউ রাস্তা থেকে কিনছেন। আবার কেউ ইছামতি নদীর পাড়ে নৌকা নিয়ে ঝাকা ভর্তি বাঙ্গি কিনে পসরা সাজিয়ে ফিরছেন নিজ এলাকার হাট বাজারে। বসন্তের ভোরের সকাল যেন ওই এলাকার মানুষের কাছে অনেকটা মেলার মতো। সকাল হলেই ঢাকা শহর ও তার আশপাশের জেলা থেকে ফরিয়ারা ভীড় জমান এখানে। তবে বিগত বছর গুলোর তুলনায় এ বছর ফলন ভালো হয়েছে। সেই তুলনায় দামও পাচ্ছে কৃষক। তাঁরা অনেকটাই খুশি। ভোর হতে কঠোর পরিশ্রম করলেও কৃষকের মুখে হাসি যেন লেগেই আছে।

ক্রেতা রশিদ মোল্লা বলেন, তিনি এ মৌসুমে প্রতিদিন সকালে এ ফল কিনে নবাবগঞ্জের বিভিন্ন বাজার বিক্রি করেন। ছোট বড় আকৃতি ভেদে দাম উঠানামা করলেও সরাসরি কৃষকরে নিকট হতে তিনি ঝাকা চুক্তিতে বাঙ্গি কিনছেন। প্রতি ঝাকার দাম ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা। এতে গড়ে প্রতিটি বাঙ্গির দাম ৩৫ থেকে ৪০ টাকা কেনা হচ্ছে। বিক্রি করছেন ৬০ থেকে ১০০ টাকা পর্যন্ত। তবে ঘাটতি আছে বলেও জানান তিনি।

ভোর সাড়ে ৪টা থেকে কৈলাইল ভাঙ্গাভিটা সড়কে গাড়ির বহর জমে। তাঁরা এ বাঙ্গি কিনতে আসেন বলে জানান। তেমনি একজন মফিজ উদ্দিন। তিনি এসেছেন মুন্সিগঞ্জের সিরাজদিখান উপজেলার রাজানগর থেকে। প্রায় ৫শত পিস বাঙ্গি কিনে ট্রলারে তুলেছেন। তিনি বলেন, ঢাকা, মুন্সিগঞ্জ, মানিকগঞ্জ ও নারায়নগঞ্জে আশপাশে এ রকম বাঙ্গির চাষ আর কোথাও নেই। এখানে কিনতে এবং পরিবহনে বেশ সুবিধা। এছাড়া ভাঙ্গাভিটার বাঙ্গি ঐতিহ্য ভিন্ন। স্বাদেও ভিন্ন। ভাঙ্গাভিটার বাঙ্গি মানেই এই গরমের সিজনে গ্রাহকের কাছ অন্য রকম চাহিদা। তাই এখান থেকে কিনে বিক্রি করি।

বাঙ্গি চাষী শ্যামল মন্ডল বলেন, চার দশক ধরে এ ফলের চাষ করেন। এবারও প্রায় ১০ বিঘা জমিতে এ বাঙ্গির চাষ করেছেন। সারা বছর এ কৃষির আয় থেকেই তার সংসার চলে। মোটামুটি দাম পেয়ে অনেকটাই খুশি তিনি। প্রায় চার মাস কষ্ট করে এ ফলটি বিক্রির উপযোগী হয়। ফাল্গুন মাসের শুরু থেকে চৈত্রের প্রথম সপ্তাহেই শেষ হয়ে যায়।

কৃষক বাদল সরকার সরাসরি ক্ষেতে বসেই বাঙ্গি বিক্রিতে ব্যস্ত। তিনি বলেন, এবছর বেশ ভালো উৎপাদন হয়েছে। আমার ৫ লাখ টাকা পুঁজির পুরোটাই ক্যাশ করেছি। আরো ৫/৬ লাখ টাকা বিক্রি করতে পারবো বলে আশা করছি।

নবাবগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা জনাবা আসমা জানান বলেন- ভাঙ্গাভিটা গ্রামে প্রায় ৫০ বছর ধরে বাঙ্গি চাষ করছে। এ বছর ২০০ হেক্টর জমিতে বাঙ্গির ফলন হয়েছে। বাঙ্গিতে এন্টিঅক্সিডেন্ট এবং ফাইবার থাকায় ডায়বেটিকস রোগী জন্য ফলটি খুবই উপকারী। রমজান মাসে বাঙ্গি পরিপূর্ণ হওয়ার কারণে কৃষক তার ন্যায্য মূল্য পাচ্ছে। বাঙ্গি চাষের জমিগুলো ইছামতি নদীর পাশে থাকায় খরা প্রবনের কারণে ভাল ফলন হয়েছে।

খবরটি শেয়ার করুন

© All rights reserved © 2024 thedailyagnishikha.com
Design & Developed BY Hostitbd.Com