বৃহস্পতিবার, ১৭ এপ্রিল ২০২৫, ০৮:৫১ অপরাহ্ন
সাহাবউদ্দীন,বিশেষ প্রতিনিধিঃ ইসরায়েলের জায়নবাদী নেতানিয়াহুর সরকার কর্তৃক ফিলিস্তিনের গাজায় অব্যাহত গণহত্যা বন্ধের দাবিতে বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল-বাসদ নারায়ণগঞ্জ জেলা শাখার উদ্যোগে মঙ্গলবার বিকাল ৪টায় নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাবের সামনে বিক্ষোভ সমাবেশ ও শহরে মিছিল অনুষ্ঠিত হয়।
বাসদ নারায়ণগঞ্জ জেলার সদস্যসচিব আবু নাঈম খান বিপ্লবের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সমাবেশে বক্তব্য রাখেন, গার্মেন্টস শ্রমিক ফ্রন্ট জেলার সভাপতি সেলিম মাহমুদ, বাসদ জেলার সদস্য এস এম কাদির,সমাজতান্ত্রিক মহিলা ফোরাম জেলার সাধারণ সম্পাদক সুলতানা আক্তার, গার্মেন্টস শ্রমিক ফ্রন্ট জেলার সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম শরীফ।
নেতৃবৃন্দ বলেন,মধ্যপ্রাচ্যে আধিপত্য বিস্তার এবং তেল সম্পদের উপর দখলদারিত্বের প্রয়োজনে ১৯৪৮ সালে ‘ইসরায়েল’ নামক একটি কৃত্রিম জায়নবাদী সামরিক রাষ্ট্রের সৃষ্টি করেন সাম্রাজ্যবাদী গোষ্ঠী। ৭ হাজার কিলোমিটার দিয়ে শুরু হলেও ক্রমাগত ফিলিস্তিনের জায়গা দখল করে বর্তমানে ২২ হাজার কিলোমিটার বিস্তৃত হয়েছে এই কৃত্রিম রাষ্ট্রটি। ইতিমধ্যেই গাজার অর্ধেক ভূমি দখল করে নিয়েছে ইসরাইল। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ সাম্রাজ্যবাদী দুনিয়া অর্থ ও অস্ত্র দিয়ে এটিকে দানবীয় করে তুলেছে। সর্বশেষ ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া ইসরায়েলি হামলায় প্রায় ৫১ হাজার ফিলিস্তিনি নিহত এবং ১ লক্ষ ১৫ হাজার আহত হয়েছে। এর মধ্যে অর্ধেকের বেশি নারী ও শিশু। জাতিসংঘের তথ্য মতে গাজায় ইতিমধ্যে প্রায় ৬৯ শতাংশ ভবন ধ্বংস বা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গাজা থেকে ২২ লক্ষ বাসিন্দা সরে গিয়ে ঐ অঞ্চল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে ছেড়ে দিতে বলেছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র গাজা ও পশ্চিম তীরে বিলাসবহুল রিসোর্টসহ পর্যটন কেন্দ্র তৈরির ঘোষণা দিয়েছে।
নেতৃবৃন্দ আরও বলেন, এটি মুসলমান বনাম ইহুদির যুদ্ধ নয়, এটি মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের নেতৃত্বে ও ইসরাইলি জায়েনবাদের বিরুদ্ধে ফিলিস্তিনি জনগণের স্বাধীনতার লড়াই। গণহত্যাকারী নেতানিয়াহু ও তার দোসরদের বিরুদ্ধে খোদ ইসরায়েলে ব্যাপক বিক্ষোভ চলছে। ইসরায়েলের কমিউনিস্ট পার্টিসহ বিভিন্ন গণতান্ত্রিক শক্তি ও ব্যক্তি ফিলিস্তিনে গণহত্যার প্রতিবাদ করছে। একদিকে ধর্ম-বর্ণ, দেশ নির্বিশেষে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বব্যাপী গণহত্যার প্রতিবাদ হচ্ছে, অন্যদিকে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের তাবেদার সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের মুসলিম অধ্যুষিত দেশগুলো কথিত মুসলিম উম্মা ও ভ্রাতৃত্বের কথা বলে নির্বিকার রয়েছে শুধু নয় মিসর, জর্ডান, বাহরাইন, সংযুক্ত আরব আমিরাতসহ কতিপয় মুসলিম দেশ জায়নবাদী ইসরাইল রাষ্ট্রের সাথে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন করেছে। এটি অত্যন্ত লজ্জাজনক।
বক্তব্যে নেতৃবৃন্দ গতকাল প্যালেস্টাইনের সাথে সংহতি জানানোর মিছিল থেকে দেশের বিভিন্ন স্থানে বাটাসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে হামলা, ভাংচুর ও লুটপাটের ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে হামলা-লুটপাটের সাথে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান।
নেতৃবৃন্দ গাজায় ইসরাইলি হামলা, গণহত্যার বিষয়ে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতির প্রসঙ্গে বলেন, এটা খুবই মামুলী বক্তব্য হয়েছে। সরকারের বিবৃতিতে জায়নবাদী ইসরাইলের মদদদাতা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কথা বিন্দুমাত্র উল্লেখ না করায় তীব্র নিন্দা ও ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, বর্তমান অন্তবর্তী সরকার প্রধান উপদেষ্টা শান্তিতে নোবেল পেয়েছেন অথচ বিশ্ব আজ অশান্তিতে ছেয়ে গেছে। গাজা জ্বলছে অথচ ইউনুস সাহেবের এব্যাপারে কোন বক্তব্য বিবৃতি নাই।
তিনি বলেন, এমনিতেই ইসরাইলের প্রতি ড. ইউনুস এর দৃষ্টিভঙ্গি সম্পর্কে জনমনে সন্দেহ রয়েছে কারণ ২০২৩ সালের ১৩ অক্টোবর প্রকাশিত সংবাদে দেখা যাচ্ছে ‘গ্রামীণ আমেরিকা’ নামক একটি প্রতিষ্ঠান ইসরাইলকে ১০০ কোটি টাকা সাহায্য দিয়েছে। ঐ প্রতিষ্ঠানের কো-চেয়ারম্যান হলেন ড. ইউনুস। ফলে বর্তমানে গাজায় গণহত্যা এবং ইসরাইল এর ভূমিকা নিয়ে ড. ইউনুসের বক্তব্য স্পষ্ট করার জন্য তিনি জোর দাবি জানান।
নেতৃবৃন্দ বাংলাদেশ সরকারকে ইসরায়েলের সাথে সকল কূটনৈতিক সম্পর্ক বাতিল করা ও আন্তর্জাতিক সকল ফোরামে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে এবং মদদ দাতা মার্কিনের বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়ায় আহ্বান জানান। গাজায় অব্যাহত গণহত্যা বন্ধে যথাযথ ভূমিকা পালন করতে ব্যর্থ হওয়ায় জাতিসংঘের কঠোর সমালোচনা করেন নেতৃবৃন্দ।