বুধবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৫, ০৬:২১ পূর্বাহ্ন
মোঃ কামাল পাঠান, সরাইল (ব্রাহ্মণবাড়িয়া) প্রতিনিধি: মাত্র দেড় আনা কানের দুলের জন্য জীবন দিতে হলো, বিশ্বাসঘাতক প্রতিবেশীর হাতে ছোট্ট শিশু মীমের, দুনিয়ার কোন কিছু বোঝার আগেই জীবনের আলো নিভে গেল, দেড় আনা কানের দুলের লোভে ৬ বছর বয়সী স্কুল পড়ুয়া মীমকে হত্যা করেছে প্রতিবেশী জান্নাত ও তার পরিবার বলে অভিযোগ করেছে নিহত মীম এর পরিবার, ঘটনাটি ঘটে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সরাইল উপজেলার পাকশিমুল ইউনিয়নের কালিশিমুল মাইঝ হাটি গ্রামে।
এজাহার ও পারিবারিক সূত্রে জানা যায় : পাকশিমুল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রথম শ্রেণীর ছাত্রী খাদিজা আক্তার প্রকাশ মীম (৬) স্কুল শেষে বাড়ি ফিরে খেলাধুলা করছিল বাড়ির পাশেই এমন সময় প্রতিবেশী মনছুর আলীর মেয়ে জান্নাত (১৯) এবং মনছুর আলী স্ত্রী কুলসুম বেগম, খাদিজা আক্তার প্রকাশ মীমকে আলী ইসলামের স্ত্রী নাজমা বেগম (মীমের মা) এর সামনে থেকে ডেকে তাদের বাড়িতে নিয়ে যায়।
এর পর যথাসময়ে খাদিজা আক্তার প্রকাশ মীম বাড়ি ফিরে না এলে মীম এর মা এবং পরিবারের লোকজন খোঁজাখুঁজি শুরু করে এমনকি মাইকিং করেও কোন সন্ধান পাওয়া যায়নি, ১২ থেকে ১৮ ঘন্টার ব্যবধানে স্কুল পড়ুয়া শিশু খাদিজা প্রকাশ মীমের লাশ পাওয়া যাই বাড়ির পাশে পুকুরে।
প্রাথমিক ধারণায় শিশু মীমের মৃত্যু পানিতে ডুবে হয়েছে বলে জানা গেলেও মুহূর্তেই পাল্টে যায় সেই চিত্র, মৃত্যুর সময় শিশু মীমের মুখ ভর্তি মাটি ঠুসা ছিল এমন ঘটনায় এলাকায় চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়, সন্দেহ করা হয় হত্যার, তবে কারা ঘটিয়েছে এমন ঘটনা শুরুতে জানা না গেলেও কয়েক ঘন্টার ব্যবধানে পরিষ্কার হয় বিষয়টি, প্রতিবেশী মনসুর আলীর মেয়ে জান্নাত (১৯), মনসুর আলীর স্ত্রী কুলসুম বেগম (৪৭), মনসুর আলীর ছেলে মাসুম মিয়া (২৩), মৃত নাদির হোসেনের ছেলে মনসুর আলী (৫৫), মৃত নাদির হোসেনের ছেলে আনসার আলী (৪৮), মৃত আব্দুর রহমানের ছেলে পারভেজ আলী (৪৬), মৃত আব্দুল রহমানের ছেলে দরবেশ আলী (৪৩) সর্ব সাং কালিশিমুল (মাইজহাটি) বাড়িঘর তালাবদ্ধ করে পালিয়ে যায়।
ঘটনার দিন ১৮ ফ্রেব্রুয়ারি দুপুর আনুমানিক ১২টার সময় ফুসলিয়ে লোভ দেখিয়ে মীমকে বাড়ি থেকে মনসুর আলীর মেয়ে জান্নাত ডেকে নিয়ে যায় পরবর্তীতে ফাঁকা স্থানে মীমের কানে থাকা দুল ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করলে এতে মীম বাঁধা দেয়, কিন্তু ১৯ বছর বয়সী ঘাতক জান্নাত এবং তার পরিবারের সদস্যদের শক্তির কাছে পেরে উঠতে পারেনি মাত্র ৬ বছর বয়সী মীম, দস্তা দস্তি করে বুকে, পিঠে, নাকে চেপে ধরে শ্বাসরোধে মীমকে হত্যা করে জান্নাত ও তার পরিবার। ঘটনা ধামাচাপা দিতে শিশু মীমকে বাড়ির পাশেই পরিত্যক্ত ঘরের ভিটে মাটিতে চাপা দেয় পরে রাতারাতি সেখান থেকে উঠিয়ে পার্শ্ববর্তী পুকুরের পাশে ফেলে আসে। এনই ধারণা করে মীমের মা ও বাবা।
তার পর এলাকার কেউ সরাইল থানা পুলিশ কে খবর দিলে এসআই জাহিদ এসে লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর হাসপাতালে প্রেরণ করেন।
এ ঘটনায় মৃত মীমের পিতা আলী ইসলাম বাদী হয়ে মেয়ে হত্যা বিচার চেয়ে ১।জান্নাত ২।কুলসুম বেগম ৩। মাসুম মিয়া ৪।মনসুর আলী ৫।আনছর আলী ৬। পারভেজ আলী, ৭।দরবেশ আলী কে আসামি করে ব্রাহ্মণবাড়িয়া বিজ্ঞ সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট (সরাইল) আদালতে দঃ বিঃ ৩৬৪/৩০২/২০১/১০৯/৩৪ ধারা যার ক্রমিক নং (০২৩৮৩৭৭/০২৩৮৩৭৮/০২৩৮৩৭৯) মামলা দায়ের করেন।
এ হত্যাকান্ডের ঘটনায় কালিশিমুল ৫নং ওয়ার্ডের সাবেক মেম্বার দানা মিয়া মিডিয়া প্রতিনিধিকে জানান,ঘটনার পরদিন লাশ পাওয়া গেলে চায়ের দোকানে আমি বসেছিলাম তখন আসামি আনসার আলী এবং মনসুর আলীও ছিল সেখানে আমি তাদেরকে প্রশ্ন করেছিলাম তোদের বাড়ির সামনে এই ঘটনা ঘটেছে ফিঙ্গারপ্রিন্ট এর ব্যবস্থা করা হচ্ছে সবার আঙ্গুলের ছাপ নেওয়া হবে, আসামি কে তাৎক্ষণিক বের হয়ে আসবে একথা শুনে রাতারাতি তারা বাড়িঘর তালাবদ্ধ করে পালিয়ে যায়। তিনি আরো বলেন আমরা মীম হত্যার বিচার ফাঁসি চাই, আসামিকে ধরে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া হোক।
মীম হত্যা বিষয়ে আমরা কয়েক জন সাংবাদিক এলাকায় গেলে স্থানীয় সাহেব সরদারগণ বলেন মীম কে স্বর্ণচুর জান্নাত ও তার পরিবারই মীম কে হত্যা করেছে এমন কি তাদের পক্ষ থেকে আমাদের কাচে লোক পাঠাচ্ছে দরবার শেষ করার জন্য।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পিবিআই শাহ আলম জানান,প্রাথমিক ধারণায় শিশু মীমকে হত্যা করা হয়েছে বলে মনে হচ্ছে, তবে তদন্ত চলমান আছে তদন্ত শেষে এ বিষয়ে আমরা নিশ্চিত হতে পারব।