রবিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৫, ০৬:৩৪ অপরাহ্ন
আন্তর্জাতিক ডেস্ক: যাঁরা শারীরিক ভাবে মেয়ে হয়ে জন্মেছেন, তাঁদেরই ‘মহিলা’ বলা যাবে। রূপান্তরিত মহিলাদের ‘মহিলা’ বলা যাবে না। গত বুধবার একটি মামলায় এমনটাই রায় দিয়েছে ব্রিটেনের সু্প্রিম কোর্ট। যার পর থেকে তৃতীয় লিঙ্গ সম্প্রদায়ের মধ্যে অসন্তোষ দানা বেঁধেছে।অভিযোগ, এভাবে তাদের অধিকার কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা চলছে। সেই অসন্তোষই স্থানীয় সময় শনিবার বিক্ষোভের আকারে ফেটে পড়ল লন্ডনের রাস্তায়। পার্লামেন্ট স্কয়ারের কাছে জড়ো হলেন হাজার হাজার মানুষ। তাদের অধিকাংশই ট্রান্সজেন্ডার।
সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, ইংল্যান্ড, স্কটল্যান্ড এবং ওয়েলসের হাজার হাজার ট্রান্সজেন্ডার তাদের অধিকারের সমর্থনকারী মানুষ প্রতিবাদে পথে নেমেছেন। শনিবার লন্ডনের জমায়েতকে তারা ‘জরুরিকালীন বিক্ষোভ প্রদর্শন’ বলে উল্লেখ করেছেন। অনেকের হাতে তৃতীয় লিঙ্গ সম্প্রদায়ের অধিকার সুরক্ষিত করার দাবিতে এবং তাদের স্বাধীনতার দাবিতে লেখা প্ল্যাকার্ড এবং রংধনু রঙের পতাকা দেখা গেছে। স্লোগানে স্লোগানে ছেয়ে ছেছে পার্লামেন্ট স্কয়ার।
বুধবারের রায়ে ট্রান্সজেন্ডারদের অধিকারে হস্তক্ষেপ করা হয়েছে, এমন অভিযোগ মানতে চায়নি ব্রিটেনের সর্বোচ্চ আদালত। আদালত জানিয়েছে, ট্রান্সজেন্ডারদের অধিকার সুরক্ষিতই থাকবে। এই রায়ের পর বৈষম্যের হাত থেকে তারা রক্ষা পাবেন।
ব্রিটেনের মানবাধিকার কমিশনের প্রধান জানিয়েছেন, সুপ্রিম কোর্টের রায়ের অর্থ হল এবার থেকে নারীদের শৌচাগার, হাসপাতালের ওয়ার্ড কিংবা খেলার দল থেকে ট্রান্সজেন্ডারদের আলাদা করা হবে।
পার্লামেন্ট স্কয়ারের সামনে দাঁড়িয়ে ১৯ বছরের ট্রান্সজেন্ডার তরুণী সোফি গিবস বলেন, “আপনার অধিকার আপনার কাছ থেকে কেড়ে নেওয়া হচ্ছে। এটা একটা ভয়ানক সময়। আমরা তথাকথিত উন্নত সমাজে বাস করতাম। কিন্তু সেই সমাজই এখন এমন ভয়ঙ্কর, ক্ষতিকর রায় শোনাচ্ছে।”
ব্রিটিশ সুপ্রিম কোর্টে পাঁচ বিচারপতির বেঞ্চ বুধবার এই রায় দিয়েছিল। সরকারের বক্তব্য, রায়ের ফলে সেবাদানকারীদের কাজে স্বচ্ছতা আসবে, নারীরা আত্মবিশ্বাস পাবেন।
পরিসংখ্যান বলছে, ইংল্যান্ড, স্কটল্যান্ড এবং ওয়েলসের মোট জনসংখ্যা সাড়ে ছ’কোটির কিছু বেশি। তাদের মধ্যে ১ কোটি ১৬ লাখ মানুষ ট্রান্সজেন্ডার। এখনও পর্যন্ত সাড়ে আট হাজারের বেশি লিঙ্গ পরিবর্তনের সনদপত্র দিয়েছে সরকার।
ব্রিটিশ সুপ্রিম কোর্ট জানিয়েছে, কারও লিঙ্গ কী, তা ব্যাখ্যা করার জন্য সনদপত্র ব্যবহার করা হলে পুরুষ এবং নারীর সংজ্ঞার সঙ্গে তার বিরোধ ঘটতে পারে। ২০১০ সালের সমতা আইনে যে বৈষম্যবিরোধী বিধানগুলো দেওয়া হয়েছে, তা কেবল জৈবিক লিঙ্গের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য হবে।
বিক্ষোভকারীদের দাবি, এই রায় তৃতীয় লিঙ্গ সম্প্রদায়ের অধিকার খর্ব করার পথ দেখাল। আগামী দিনে এমন আরও রায় দেওয়া হবে এই রায়ের উদাহরণকে সামনে রেখে।
সূত্র: বিবিসি, দ্য গার্ডিয়ান